কৃষ্ণকুমার দাস: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ফের বিজেপিতে ভাঙন। দলের এক পরিচিত প্রভাবশালী নেতা সদলবলে পদ্ম ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরে মঙ্গলবার যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের হাত ধরে। নন্দীগ্রামের ভেকুটিয়া অঞ্চলের জেলেমারি গ্রামে যাঁর হাত ধরে গত বিধানসভা ভোটে এলাকায় বিজেপি প্রভাব বিস্তার করেছিল, পদ্ম শিবিরের সেই মণ্ডল কমিটির নেতা এবং মণ্ডল সভাপতির ভাই এদিন তৃণমূলে যোগ দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘‘শুভেন্দুর কথায় বিভ্রান্ত হয়ে তৃণমূল ছেড়ে ধর্মের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে গ্রামে বিভেদ তৈরি করেছি। এই পাপ থেকে মুক্তি পেতে এবং মানুষের সেবা করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দলে ফিরে এলাম।’’ কথা শেষ হতেই বক্তার পাশে দাঁড়ানো সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া কর্মীরা স্লোগান দেন, ‘জয় বাংলা’। এদিন সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh), নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ, সবুজ প্রধান, জয়দেব দাস প্রমুখ।
জমি আন্দোলনের গর্ভগৃহ নন্দীগ্রামের ভেকুটিয়া এবং হরিপুরে এদিন দু’টি সভা ছিল তৃণমূলের। গ্রামগুলি মূল পাকা রাস্তা থেকে অনেকটাই ভিতরে। স্বভাবতই গাড়ি ছেড়ে প্রথমে পায়ে হেঁটে, পরে সাইকেলে করে সভাস্থলে পৌঁছন কুণাল ঘোষ। তাঁকে দেখে গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল সাড়া পড়ে যায়। উচ্ছ্বসিত তৃণমূল মুখপাত্র বেশ কিছুটা যাওয়ার পর একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। খবর নেন, দিদির সুরক্ষা কবচের অন্তর্গত সমস্ত প্রকল্প ওই পরিবার পাচ্ছেন কি না। শেষে জল চেয়ে তেষ্টা মিটিয়ে সভার উদ্দেশে এগিয়ে যান তিনি। ভেকুটিয়ার সভায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে, মহিলাদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি ও স্লোগানে গলা মেলানোয় দলীয় নেতাদের লড়াই করার মনোবল আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে স্বীকার করেন স্থানীয় প্রবীণ নেতৃত্ব। সভায় কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বনাশা মূল্যবৃদ্ধি নীতির প্রতিবাদ করার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পগুলির সার্বিক সহায়তার তথ্য তুলে ধরেন কুণাল। একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতাকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে লোডশেডিংয়ে দুনম্বরি করে জেতা বিধায়ক। মামলা থেকে নিস্তার পেতে লোকসভা ভোটে অন্যত্র প্রার্থী হতে চাইছে শুভেন্দু। কিন্তু সেখানেও আমরা ওকে গো-হারা হারাব। এখানেও হারবে, সেখানেও হারবে।’’
ভেকুটিয়া এবং হরিপুর দু’টি গ্রামেই গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি ভাল ফল করেছিল। স্বভাবতই পঞ্চায়েত ভোটের আগে নিজেদের সাংগঠনিক ক্ষেত্র মজবুত করে পুনরুদ্ধারে তৃণমূল যে নেমে পড়েছে, তা এদিনের সভা থেকে স্পষ্ট। কুণাল-সহ সমস্ত বক্তাই বিজেপির কথায় বিভ্রান্ত হয়ে পাশ থেকে সরে যাওয়া গ্রামবাসীদের কাছে মাথা নত করে দলীয় কর্মীদের সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি পালনে জোর দেন। ভেকুটিয়ার পর হরিপুরের জনসভায় পৌঁছন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে পূর্ব মেদিনীপুরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কুণাল ঘোষ। সেখানে বেশ কিছুদিন ধরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রামবাসীদের একাংশকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। সভায় পৌঁছেই গোটা বিষয়টি জেনে নেন তৃণমূল মুখপাত্র। পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘গ্রামের মানুষকে কিছুতেই উচ্ছেদ করা যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পুনর্বাসন না করে যে কোনওরকম উচ্ছেদের বিরোধী। গোটা বিষয়টি নিয়ে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের যে আইনজীবীদের ডেস্ক রয়েছে, তারা হরিপুরে এসে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় আইনি সাহায্য দেবে।’’ হরিপুরের সভার পর দাউদপুরের নজরুল মেলায় যান তৃণমূল মুখপাত্র। সেখানে কুণাল ছাড়াও ছিলেন কঁাথি সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি, অরুণাভ ভুঁইয়া, সামসুল ইসলাম এবং এদিনই তমলুক জেলা তৃণমূল জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া আজগর আলি পল্টু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.