বাবুল হক, মালদহ: জলের দরে আম! এক কাপ চায়ের দামে মিলছে এক কেজি আম। গাছপাকা লক্ষ্মণভোগ, পাঁচ টাকায় দেড় কেজি। খিরসাপাতি আর হিমসাগরও বিকোচ্ছে মাত্র ৫ টাকা কেজি দরে। কম দামের রেকর্ড! বিগত পঁচিশ বছরের মধ্যে কখনও এমন তলানিতে ঠেকেনি মালদহের আমের দর।
শহরের নিয়ন্ত্রিত আমবাজার থেকে জেলার যে কোনও আমের বাজার। বুধবার জেলার সর্বত্র ছিল একই চিত্র। এদিন সাতসকালে বাজারে গিয়ে আমের এই দর শুনে অবাক হয়েছেন অনেকেই। জলের দরে আম? অন্তত আধ-মণ কিনে নিয়ে ঘরে ফিরেছেন টোটো চালকও। এত বেশি পরিমাণে পাকা আম কি আর বাড়িতে খাওয়া যায়! তাহলে তো আমসত্ত্ব তৈরির জন্য এই সস্তার পাকা আম কেনা যেতেই পারে। কিনেছেনও অনেকেই। যত বিক্রি হচ্ছে, ততই আমদানি। বাহক পিকআপ ভ্যান। আমবাগান থেকে সোজা আমবাজারে। সবই গাছপাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, তাঁরা দেড় থেকে দু’টাকা কেজি দরে এই আম কিনছেন বাগানেই। পরিবহণ খরচ যোগ দিয়ে বিক্রি করছেন। কিন্তু এই মরশুমে মালদহের আমের কেন এই দশা? চাষিদের তো সর্বনাশ! আমবাগান ফেরত চাষি থেকে পাইকার কিংবা আমব্যবসায়ী, প্রত্যেকেই এই তাপপ্রবাহকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁরা জানান, দাবদাহের দাপটে গাছেই পেকে যাচ্ছে লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাতি। এমনকী, কাঁচা মিঠা থেকে জগৎবিখ্যাত ফজলিও। মাত্র তিনদিনেই গাছপাকা আমে ভরে গিয়েছে মালদহের আমবাগান। পাকা আমে পচন ধরতে বেশি সময় লাগে না। ঝরেও পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এটা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমের জেলা মালদহের আমচাষিদের। কোনও রকমে বাগান থেকে গাছপাকা আম পেড়ে তুলে দিচ্ছেন পাইকারদের হাতে। এই তাপপ্রবাহে জেলাজুড়েই আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দাবদাহ থাবা বসিয়েছে আমের ফলনে। মাথায় হাত পড়েছে আমচাষিদের।
জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েক বলেন, “জেলার আম বিশ্ববাজারে পৌঁছতে পারলে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন। কিন্তু বড় দাগা দিল এই তাপপ্রবাহ। জেলায় প্রায় ৩১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। গত বছর জেলায় আমের ফলন হয়েছিল সোয়া তিন লক্ষ মেট্রিক টন। এবার ফলন পৌঁছে যেত পৌনে চার লক্ষে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মালদহের আম বিক্রি হত। কিন্তু তাপপ্রবাহ সেই আশা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।” ইংলিশবাজারের এক আমচাষি মহাম্মদ জলিল বলেন, “এই গরম আর তাপপ্রবাহে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল। তাপে গাছেই পেকে যাচ্ছে আম। ঝরে নষ্ট হচ্ছে।”
এবার মালদহে আমের ব্যাপক ফলনের আশা করেছিলেন চাষিরা। আমব্যবসায়ী মহল থেকে উদ্যানপালন দপ্তরেরও আশায় ছিল। কিন্তু সেই আশার গুড়ে কার্যত বালি ঢেলে দিয়েছে আবহাওয়া বলে আমচাষিরা মনে করছেন। এদিন সকালে হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া, মানিকচক, ইংলিশবাজারের গৌড়বঙ্গ, পর্বত্যা, কাজিগ্রাম, আরাপুর, কোতোয়ালি এলাকার আমবাগানগুলি থেকে কুইন্টাল কুইন্টাল ঝরা গাছপাকা আম কুড়িয়েছেন চাষিরা। সেগুলি এক-দেড় টাকা কেজি দরে বাগানে বসেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল চৌধুরি জানিয়েছেন, এই তাপপ্রবাহের দাপটে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আমের। বাগানে বাগানে শুধু ঝরা পাকা আম পড়ে রয়েছে। গরমে পচন ধরছে। চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.