নব্যেন্দু হাজরা: ফলন ছিল ভালই। কিন্তু মিনিট কয়েকের ঝড়েই দফারফা৷ মঙ্গলবার আর কিছুটা শনিবার৷ দু’দিনের ঝড়ে পাকার আগেই বাগানে গড়াগড়ি হিমসাগর, মধুগুলগুলির। ফলে দিন দুয়েকের ব্যবধানে বাজারে হাজির ঝুড়ি ঝুড়ি কাঁচা আম। এক লপ্তে দামও কমেছে অনেকটা। পাইকারি বাজারে যে কাঁচামিঠে মঙ্গলবার সকালেও বিকিয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা প্রতি কেজিতে, সেই আমই রবিবার সকালে দাম হয়েছিল আট থেকে ১০ টাকা। বাজারে গিয়ে সস্তায় চাটনি খাওয়ার আম পেয়ে তাই মুখে চওড়া হাসি মধ্যবিত্তের। কিন্তু সে হাসি যে স্থায়ী হবে না, তা জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাই৷
কারণ রাজ্যে যে পরিমাণ আমের ফলন হয়েছিল তার ৩০ শতাংশই মঙ্গলবারের ঝড়ে পড়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে সেই মালই বাজারে হাজির। কাঁচা হিমসাগর, গোলাপখাসের দাম এক ধাক্কায় কমলেও পাকা আমের জোগানে ঘাটতির সম্ভাবনা। তাঁদের দাবি, এবার আমের বিপুল ফলন ছিল, ফলে আশা করা গিয়েছিল, ২০ টাকা কেজিতেও হিমসাগর খেতে পারবেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু যে পরিমাণ আম ঝরে গিয়েছে, তাতে সেই সম্ভাবনায় ইতি পড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অন্যান্য বছরেও কালবৈশাখী হয়। কিন্তু এবারের মতো ক্ষতি হয় না। আসলে এবারের ঝড়ে প্রচুর আম সমেত গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। ফলে একসঙ্গে কোনও কোনও গাছ থেকে এক-দেড়শো আমও ঝরে গিয়েছে৷
“যাঁরা বাগান জমা নিয়েছিলেন, তাঁদের স্বভাবতই তাই মাথায় হাত। কাঁচা আমই বাজারে ছাড়তে হচ্ছে জলের দরে। লাভ তুলতে গেলে স্বভাবতই আম পাকলে তাঁদের দাম বাড়াতে হবে চড়চড়িয়ে। পাইকারি বাজার এবং ফড়েদের হাত ঘুরে স্বভাবতই খোলা বাজারে সেই দাম বেশ চড়বে।” জানান মানিকতলা বাজারের এক ব্যবসায়ী। তার মধ্যেই মালদহে সেভাবে ঝড়ের দাপট না থাকায় সেখানকার আমের বিশেষ ক্ষতি হয়নি বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কোলে মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, শুধু আমেরই যে ক্ষতি হয়েছে তা নয়। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে লিচু এবং কালো জামেরও। সোনারপুর থেকে বারুইপুর-লিচু হওয়ার আগেই গাছের ফুল ঝরে গিয়েছে। তাই ফলন কেমন হবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তায় বাগান মালিকরা। এবারের ঝড়ে আম বা লিচু গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।
শিয়ালদহ কোলে মার্কেটেই রবিবার সকালে কাঁচা আম বিকিয়েছে আট থেকে ১০ টাকা প্রতি কেজি। খোলা বাজারে গিয়ে অবশ্য দাম দ্বিগুণ হয়েছে। রাজ্যে ঠিক কত সংখ্যক আম গাছ রয়েছে, বা কত আম ফলে, তার সঠিক রেকর্ড কারও কাছেই নেই। তবুও যে সংখ্যক কাঁচা আম গত দু’দিন ধরে বাজার ছেয়েছে, তাতেই দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ চাষি ও ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলেন, “মঙ্গলবারের ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর আম ঝরে গিয়েছে। তাই কাঁচা আমেই বাজার ভরেছে। আম পাকলে দাম বাড়তে পারে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.