সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: লোকসভা ভোটের আগেই দেশে চালু হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। চালু রয়েছে সেই সংক্রান্ত পোর্টাল। তবে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে দোলাচল রয়েছে উদ্বাস্তুদের মনে। এই আবহে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেলেন নদিয়ার আসাননগরের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল ও তাঁর পরিবার। ভারতের নাগরিক হতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশির জোয়ারে ভাসছে এই পরিবার।
২০১২ সালে বাংলাদেশের (Bangladesh) ঝিনাইদহ থেকে বিকাশ তাঁর বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র-সহ চলে আসেন ভারতে। সেই থেকে উদ্বাস্তু হিসাবেই থাকছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যম দেখে জানতে পারেন ২০১৪ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে চলে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। তখনই সিদ্ধান্ত নেন আবেদন করবেন।
সেই মতো এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখ অনলাইনে আবেদন করেন তিনি। এক মাসের ব্যবধানে চলতি মে মাসের ২৭ তারিখ তাঁকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তথ্য যাচাইয়ের জন্য ডাকা হয়। ২৯ তারিখ বুধবার শংসাপত্র পেয়ে যায় মণ্ডল পরিবার। শংসাপত্র হাতে নিয়ে বিকাশ মণ্ডল বলেন, “২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসি আমরা।উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে জানতে পেরে অনলাইন আবেদন করেছিলাম। বুধবার আমাকে মেইল করে আমাদের সবার নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব খুশি। আর উদ্বাস্তু হয়ে থাকতে হবে না।” কেন চলে এলেন বাংলাদেশ থেকে? উত্তরে বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। ওই ভাবে কে থাকতে চায়! তাই চলে আসি ভারতে।”
২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে সই করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বিল আইনে পরিণত হলেও চলতি বছরের ১১ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিএএ চালু হওয়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে যে সমস্ত অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি) ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে এ দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন এবং অন্তত পাঁচ বছর ভারতে কাটিয়েছেন, তাঁরা নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেতে সিএএ-তে আবেদন জানাতে পারেন বলে জানায় কেন্দ্র।
কী, কী প্রমাণপত্র দেখাতে হল বিকাশকে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রমাণপত্র। ২০১৪ সালের আগের ভারত সরকারের এক প্রমাণপত্র। কোর্টের হলফনামা। ছবি। হিন্দু শংসাপত্র। যা আমরা মায়াপুরের এক সন্ন্যাসীর থেকে পেয়েছি।” হিতে বিপরীত হয়ে যাওয়ার ভয় লাগেনি? এই প্রশ্নে মুচকি হেসে সদ্য ভারতীয় নাগরিক বলেন, ” না। যে সব প্রমাণপত্র চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছিলাম। সাধারণ একটা প্রক্রিয়া। আমাদের মতো যাঁরা উদ্বাস্তু তাঁদের সকলকেই বলব আবেদন করতে।”
অন্যদিকে, নাগরিকত্ব পেয়েছেন ঠাকুরনগর বড়া এলাকার বাসিন্দা শান্তি লতা বিশ্বাস। তিনি মাসখানেক আগে আবেদন করেছিলেন। সম্প্রতি শংসাপত্র পেয়েছেন তিনি। শান্তি দেবীর শংসাপত্র আসলেও তাঁর স্বামী তারক বিশ্বাস এখনও নাগরিকত্ব পাননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.