স্টাফ রিপোর্টার: শহুরে আত্মীয়রা বুঝছেন না। পরিজনরা ঢোক গিলছেন। খটমট কোনও অঙ্ক নয়, স্রেফ একটা বিয়ের কার্ড পড়তে। ‘হুবেকবিহা’ শব্দবন্ধের অর্থ শুভ বিবাহ। কিংবা ছামড়াতল মানে বিবাহস্থান, কতজনই বা জানে? “এ ভাষার সঙ্গে পরিচিত নয় যে অনেকেই।” জানিয়েছেন কবি অভিমন্যু মাহাতো।
নিজের ভাষাকে ভালবেসে নিজের বিয়ের (Marriage) কার্ড কুড়মালি ভাষায় তৈরি করেছেন তিনি। যে ভাষাকে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal)। অভিমন্যুর হাত ধরে তা সরাসরি প্রবেশ করল বঙ্গজীবনের লোকলৌকিকতায়। যদিও আজকের নয়, এ ভাষার ইতিহাস বহু পুরনো।
কুড়মালি আদি জনজাতিদের ভাষা। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, ছত্তিশগড়, বিহার-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রচলিত এই কুড়মালি ভাষা। সারা ভারতে আদি এই ভাষায় কথা বলেন প্রায় চার কোটি মানুষ। কুড়মি জনজাতিদের মাতৃভাষা কুড়মালি। বাংলাদেশেও কুড়মালি ভাষাভাষীরা রয়েছেন। অভিনব এই বিয়ের কার্ড যাঁর সেই বিয়ের পাত্র কবি অভিমন্যু মাহাতোর কথায়, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই কুড়মালি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
আশির দশক থেকেই ঝাড়খণ্ডের রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষত্রিয় আদিবাসী ভাষা বিভাগে কুড়মালি পড়ানো হয়। পরে আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ওড়িশার কোলহান ও ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ) পড়ানো শুরু হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু স্কুলে নবম শ্রেণি থেকে কুড়মালি ভাষা পড়ানো হয়। পশ্চিমবঙ্গের সিধু-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ও দুটি কলেজে স্নাতকস্তরে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে সম্প্রতি। অদ্ভুত বিষয় হল, এই কুড়মালি ভাষার নিজস্ব কোনও লিপি নেই। অঞ্চল বিশেষে বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া ও ওড়িশি হরফ ব্যবহৃত হয়।
ভাষার মতোই অভিনব বিয়ের রীতি রেওয়াজ। অভিমন্যু আর তাঁর স্ত্রী অপর্ণা মাহাতোর বিয়েতে থাকবেন না কোনও পুরোহিত। মন্ত্র উচ্চারণ করে যে বিয়ে করেন না কুড়মালি জনগোষ্ঠীর মানুষজন। বিয়ের দিন এক আমগাছের সঙ্গে বিয়ে হবে পাত্রর। পাত্রীর বিয়ে হবে মহুল গাছের সঙ্গে। আদিম অরণ্যের ভাষাতেই ঘর বাঁধবেন পাত্রপাত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.