ছবি: দেবাশিস বিশ্বাস।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাইপোকে স্কুলে ভরতি করানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয় লাহিড়ী। পেলেন নিজের নতুন পরিচয় – মিলন মাস্টার। এখন তিনি সরকারি প্রাথমিক স্কুল মহিষকুচি নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিনা বেতনে। একটানা পরপর ক্লাস নিয়ে চলেন নিরলসভাবে। তাঁর পরামর্শ ছাড়া প্রধান শিক্ষকও একক সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ সাহস না। শিক্ষক দিবসের আগে কোচবিহারে (Cooch Behar) অনন্য নজির রাখা প্রবীণ ‘স্যর’কে কুর্নিশ জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা।
এসব আজ থেকে ২০ বছর আগেকার কথা। ভাইপোকে সঙ্গে নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় লাহিড়ি মহিষকুচি নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে ভরতি করাতে। সেই সময় স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশো। শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র চার, ক্লাস ঘরের সংখ্যা পাঁচ। খুব স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষকদের উপর চাপ বড্ড বেশি ছিল। কথায় কথায় প্রধান শিক্ষক তারাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, মৃত্যুঞ্জয় বাবুর কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। মৃত্যুঞ্জয় বাবু তখন কয়েকজন ছাত্র পড়িয়ে কিছু রোজগার করেন। পড়ানো (Teaching) তাঁর নেশা। তাই প্রধান শিক্ষকের ডাকে সাড়া দিতে তিনি দ্বিধা করেননি।
প্রতিদিন সকাল ৯ টা বাজলেই স্নান সেরে তৈরি হয়ে স্কুলে যান বক্সিরহাট থানার শালডাঙার বাসিন্দা স্নাতক মৃত্যুঞ্জয় বাবু। সবার আগে স্কুলে গিয়ে ক্লাস ঘরের তালা খোলেন। নিয়মিত অঙ্ক, ইংরাজি ও বাংলা ভাষায় ক্লাস নেন। নেশার টানে স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা করছেন। ফলের রোজগারের জন্য অন্য উচ্ছেদের খোঁজ করতে পারেনি। এখনও প্রাইভেট টিউশনি করেই নিজের খরচ চালাতে হয়। ২০ বছর ধরে যে শ্রদ্ধা এবং সম্মান তিনি পেয়েছেন তা যে কোন সরকারি সম্মানের চেয়েও অনেক বেশি বলে তিনি মনে করেন। বর্তমানে স্কুলের ছাত্রের সংখ্যা ২১০ জন হলেও, শিক্ষক সংখ্যা রয়েছেন মাত্র ৫ জন। একমাত্র ভরসার জায়গা ৬৫ বছরের ‘মিলন মাস্টার’ই।
অভিভাবকরা তাঁকে মানেন, ভালবাসেন পড়ুয়ারাও। তাই সবার সমস্যা অভিযোগের সমাধান মূলত তাকেই করতে হয়। যেখানে স্কুল, তার কাছাকাছিই থাকেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু। তাই স্বেচ্ছায় কাজের দায়িত্ব একটু বেশিই নিয়েছেন। সহকর্মীরা একসময়ে অবসর নেবেন। কিন্তু তাঁর অবসরের কোনও বয়স নেই। নিতেও চান না। আমৃত্যু পড়িয়ে যাবেন এই স্কুলে। আর গ্রামবাসীরা চান, ভালবেসে যিনি বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘ কুড়ি বছর স্বেচ্ছায় মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করছেন, তাঁকে সরকার কোনভাবে স্বীকৃতি দিক সম্মানিত করুক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.