ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: স্ত্রী রোগগ্রস্ত৷ রোগ সারছে না কিছুতেই৷ জানগুরুর নিদান, ‘তোর স্বামী একজন ডাইন৷ তাঁকে সরিয়ে দে, নইলে তোর রোগ সারবে না৷ ’ এরপরই স্ত্রী স্বামীকে মারধর করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ৷ এমনকি তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলারও চেষ্টা করেন ওই মহিলার ভাইয়েরা৷ স্ত্রীর অত্যাচারে আপাতত ঘরছাড়া স্বামী৷ বাধ্য হয়ে বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি৷ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়৷
চন্দ্রকোনার মাধবপুর গ্রামের চৈতন্য মুর্মু-র এক্কেবারে ছাপোষা গৃহস্থ৷ দুই ছেলে, স্ত্রী ও মা-বাবাকে নিয়েই সংসার৷ বছরখানেক আগে তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি মুর্মু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ চিকিৎসার খরচ জোগান দিতেও পারছেন না পেশায় দিনমজুর চৈতন্যবাবু৷ ফলে মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়৷ পাড়ার মোড়লরা শ্রীমতিকে বলেন, ‘‘তোর উপর ডাইনের কুদৃষ্টি পড়েছে৷ তাই রোগ সারছে না৷’’ স্ত্রীকে নিয়ে তাতারপুর গ্রামের জানগুরু উত্তম ঘোষ ও টুসি সোরেনের কাছে যান চৈতন্য মুর্মু৷ সঙ্গে ছিলেন তাঁর শ্যালকরাও৷ জানগুরুর নিদান, চৈতন্য মুর্মু ডাইন৷ তাঁরই কুদৃষ্টিতে শ্রীমতির রোগ সারছে না৷ তারপরই চৈতন্যকে তাঁর শ্যালকরা মারধর শুরু করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ৷ চৈতন্য মুর্মু দাবি, তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছেন শ্যালকরা৷ প্রাণভয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি৷ চৈতন্যবাবু বলেন, ‘‘আমার দুই ছেলে স্কুলে পড়ে৷ তাঁরা এসবে বিশ্বাস করে না৷ কিন্তু আমার স্ত্রী তাদেরকে ভয় দেখিয়ে রেখেছে৷ তাদের বুঝিয়েছে যে বাবা ডাইন৷ তারপর থেকে দুই ছেলেও আমার কাছে আসছে না৷’’ এমনকী, জানগুরুর নিদান শোনার পর থেকে চৈতন্যকে নিজের স্বামী বলে মানতে নারাজ শ্রীমতি৷
জ্যোতিরাম বাস্কে, লক্ষ্মী বাস্কে, চুনারাম টুডু ও ধীরেন টুডু নামে পাড়ার চার মাতব্বর তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অপবাদ দিয়েছে বলেই অভিযোগ চৈতন্যর৷ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে চন্দ্রকোণা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি৷ স্থানীয় বিডিও অভিষেক মিশ্রেরও ঘটনাটি জানিয়েছেন ৷ বিডিও বলেন, ‘‘ চৈতন্যবাবুকে যেভাবে হোক ঘরে ফেরাতেই হবে৷ পুলিশকেও বলা হয়েছে৷ আসলে শিক্ষার অভাব থেকেই এসব হচ্ছে৷’’ ওই গ্রামে একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.