সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পরপর কন্যাসন্তান হওয়ায় কয়েকদিন আগে মুর্শিদাবাদের সালারে ৬ মাসের শিশুকন্যা আছড়ে মেরেছিল নিষ্ঠুর বাবা। তারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে। মেয়ের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মারল মদ্যপ বাবা। তিনকন্যার ওই পিতা মদ খাওয়ার টাকা না পেয়ে ছোট মেয়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে ঘরে শিকল তুলে দিয়েছিল। বাইরে কলতলায় বসে মেয়েকে পুড়ে মরতে দেখেও নির্বিকার ছিল। দরজা ভেঙে বাইরে এসে কলতলায় গায়ে জল ঢেলে বাঁচার চেষ্টা করেছিল ওই তরুণী। কিন্তু বাবা তাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। পড়শিদের তৎপরতায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশ সেই গুণধর বাবা শংকর ক্ষেত্রপালকে গ্রেপ্তার করেছে।
[অন্তরার রহস্যমৃত্যুতে নয়া মোড়, মিলল সুরজিতের প্রেমিকার খোঁজ]
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সরস্বতী ক্ষেত্রপাল (১৯)। মেমারির হাটপুকুর কলেজপাড়ায় বাড়ি। মেমারি রসিকলাল হাই স্কুল থেকে গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও অকৃতকার্য হয়েছিল। এবারও পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। পাশাপাশি, মাঝেমাঝে অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজও করত সরস্বতী। মঙ্গলবার গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর আগে সরস্বতী তাঁর মা কল্পনা ক্ষেত্রপাল ও বড়দিদি পিংকি সাউকে জানান, মদের টাকা না দেওয়াতেই বাবা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর প্রতিবেশী কয়েকজনকেও একই কথা জানিয়েছিলেন ওই তরুণী। ঘটনার বিষয়ে মা কল্পনাদেবী মেমারি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ শংকর ক্ষেত্রপালকে গ্রেপ্তার করেছে বুধবার। বৃহস্পতিবার তাকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
[ভিখারির বেশে বাড়িতে ঢুকে গয়না চুরি, শেষে ধরা পড়ল চোর]
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শংকরের তিন মেয়ে। বড় পিংকি ও মেজ পূর্ণিমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সামনের মাঘ মাসে সরস্বতীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল মেমারিরই কালীরামপুরের মৃত্যঞ্জয় ক্ষেত্রপালের সঙ্গে। মঙ্গলবার দুপুরে কল্পনার মা হিমঘরে আলু বাছাইয়ের কাজে গিয়েছিলেন। দুপুরে বাড়ি ফিরে শংকর প্রথমে ভাত চায়। সরস্বতী বাবাকে ভাত বেড়ে দেন। কিন্তু তখন শংর বলে ‘ভাত নয়, মদ খাব টাকা দে’। মেয়ে টাকা না দেওয়ার লাথি মেরে ভাতের থালা ফেলে দেয় শংকর। টাকা না পাওয়ার আক্রোশে মেয়ের মাথায় মদের বোতল দিয়েও আঘাত করে। তখন সরস্বতী ঘরে গিয়ে লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে কিন্তু তখনও রাগ কমেনি শংকরের। ঘরে ঢুকে মেয়ের শরীরের উপর কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাইরে বেরিয়ে এসে ঘরে শিকল তুলে দেয়। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ওই তরুণী। পাড়াপড়শিরা চিৎকার সেভাবে শুনতে পাননি ঘর বন্ধ থাকায়।
পরে ঘর থেকে ধোঁয়া বেরতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তাঁরা এসে দেখেন ভিতরে আর্তনাদ করছে সরস্বতী। পড়শি চিনু সিং, চৈতালি বাগ, মালা ক্ষেত্রপালরা জানান, তাঁরা জানান, ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখেন কলতলার কাছে বসে রয়েছে শংকর। দরজা ভেঙে সরস্বতী বাইরে এসে কলতলায় জল নিয়ে গায়ে ঢালতে যায়। তখন শংকর লাথি মেরে তাকে ফেলে দেয়। স্থানীয়রা সরস্বতীকে ধরেন। তাঁর মা ও দিদিকে খবর দেন তাঁরা। তারপর তাঁকে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দিদি পিংকি সাউ বলেন, “হাসপাতালে ওকে বলি গায়ে আগুন দিলি কেন। তখন বোন জানায় বাবা মদ খাওয়ার টাকা চেয়েছিল, আমি দিতে রাজি হইনি বলে বাবাই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে।” স্থানীয়রা জানান, এ আগেও বিভিন্নভাবে অত্যাচার চালিয়েছে শংকর। কল্পনাদেবীকে মেরে পা ভেঙে দিয়েছিল। মেয়ের স্কুলের সব শংসাপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল। মেজ মেয়ে পূর্ণিমা দে জানান, মদ খাওয়ার টাকা না পেলেই মারধর করত বাবা। বোনের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়েও নিত।
[পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতে এল চোর! তারপর…..]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.