চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: গ্রহের মন্দ প্রভাব কে চায়? চাননি আসানসোলের নির্মল মুখোপাধ্যায়ও। তাই গ্রহের কুপ্রভাব থেকে মুক্তি পেতে জ্যোতিষীর স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জ্যোতিষী এমন পথ বাতলে দিলেন, যা এই পেশার লোকেরা সচরাচর করে না। প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য দুঃস্থদের দান করতে বললেন তিনি।
আসানসোলের হটন রোডের বাসিন্দা নির্মলবাবুর একটি পানের গুমটি রয়েছে। সেই গুমটির উপার্জন থেকেই চলে সংসার। গত কয়েকমাস ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছেন তিনি। নানা চেষ্টা করেও অবসাদ থেকে মুক্তি মেলেনি। প্রতিবেশীদের পরামর্শে জ্যোতিষীর কাছে যান নির্মলবাবু। জ্যোতিষী বলেন, শনি মহারাজের প্রকোপ পড়েছে, তাই সারছে না রোগ। সেই জ্যোতিষীই তাঁকে রোগমুক্তির উপায় বলেন। জানান, সরকারি হাসপাতালেই রয়েছে গ্রহের প্রভাব থেকে মুক্তির উপায়। উপায়টি কী? উপায় হল, সরকারি হাসপাতালের দুঃস্থ রোগীদের অর্থ সাহায্য করা। এক বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চালু রাখলেই মিলবে মুক্তি। রোগ সারাতে তাই আজকাল সকাল সকাল হাসাপাতালে হাজির হন নির্মল মুখোপাধ্যায়। সরকারি হাসপাতালের দুস্থ রোগীদের মধ্যে নিয়ম করে ফল ও নগদ অর্থ দান করবেন তিনি।
গত শনিবার থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। এদিন হাসপাতালে গিয়ে সুপারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি। তবে সুপার তাঁর চেম্বারে না থাকাতে চিকিৎসকদের কাছে যান নির্মলবাবু। চশমা চোখের ছিপছিপে চেহারার নির্মল মুখোপাধ্যায় হাতজোড় করে জানিয়েছিলেন, গ্রহের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে চান। তাই হাসপাতালে এসেছেন। যুবকের কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন রোগী ও চিকিৎসকরা। ভদ্রলোকের মুখে সবকথা শুনে আশ্বস্ত হওয়ার পর হাসপাতালের দুঃস্থ রোগীদের নগদ অর্থ ও ফলমূল বিলির অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এই ঘটনায় দুঃস্থ রোগীদের শাপে বর হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, নির্মলবাবুর দেওয়া টাকায় বাইরে থেকে হেলথ ড্রিংক ও প্রয়োজনীয় ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিনে আনতে পারবেন।
নিজের মুখেই সমস্যার কথা জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন তিনি। এর জেরে স্বস্তি পাচ্ছেন না। ব্যবসা মাথায় উঠেছে। জ্যোতিষীই তাঁকে রোগ মুক্তির নিদান দিয়েছেন। তাই জ্যোতিষীর পরামর্শ মেনে প্রতি শনিবার সরকারি হাসপাতালে এসে দুঃস্থ রোগীদের মধ্যে খাবার ও টাকা বিলি করেন তিনি।
[আসানসোলের বন্ধ খনিতে আগুন, কালো ধোঁয়ায় ঢাকল এলাকা]
হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীরা এই অভিনব ঘটনায় খুশি হলেও পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের আসানসোল শাখা কিন্তু অন্য কথা বলছে। বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য কিংশুক মুখোপাধ্যায় জানান, কুসংস্কারের শিকার ওই ব্যক্তি। তবে মন্দের ভাল ওই জ্যোতিষী পাথর, তাবিজ না দিয়ে সমাজের ভালো কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.