সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: শৈশবেই মায়ের কোল ছাড়া হয়েছিল সদ্যোজাত রকি। তাকে একটি গাছের নিচে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন এক যুবক৷ রকিকে শিকারের লক্ষ্যে চার-পাঁচটি কুকুর লড়াই তখনও চলছিল৷ গত বুধবার বেলার দিকে বাগনান থানার কাচারিপাড়ার বাসিন্দা সুজিত দাস বাড়ি ফেরার পথে ছয় নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে এই দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ান৷
তৎক্ষণাৎ তিনি কুকুরদের হটিয়ে ওই বানর শাবককে কোলে তুলে নেন, পরে আদর করে তার নাম রাখেন রকি৷ রকি আসলে একটি হনুমান শাবক। প্রায় সদ্যোজাত এই শাবকটি গাছে খেলতে খেলতে মাটিতে পড়ে যায়। গাছের নিচে তখন চার-পাঁচটি সারমেয়র দল তাকে ঘিরে ধরে৷ মা হনুমান ও তার দলবল অনেক চেষ্টা করেও তাদের শিশুটিকে কুকুরের মুখ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি। গাছ থেকে নিচে পড়ায় বানর শিশুটির গায়ের বেশ কিছু জায়গা কেটে গিয়ে সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। নড়াচড়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে বানরটি। কিন্তু প্রবাদ আছে, ‘রাখে হরি মারে কে?’ হঠাতই ঘটল এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা৷ রাস্তার কুকুরের দলকে তাড়িয়ে ছোট্ট বানর সাবককে উদ্ধার করে ওই যুবক৷
সুজিতবাবু আহত বানর শিশুটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলেন। সুজিতবাবু ভেবে দেখলেন রকিকে তার মাতৃক্রোড়ে ফিরিয়ে দেওয়া আর সম্ভব নয়। কিন্তু ‘বন্যেরা বনেই সুন্দর’ তাই কংক্রিটের বেড়াজালের মধ্যে বন্দি করে না রেখে তাকে তার আরণ্যক জীবন ফিরিয়ে দেওয়াই উচিত। তখনই তিনি বিশিষ্ট সমাজসেবী চন্দ্রনাথ বসুকে সমস্ত বিষয়টি জানান। চন্দ্রনাথবাবু সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন হাওড়া জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানস বসুর সঙ্গে।
মানসবাবু বনদপ্তরের কর্মীদের সুজিতবাবুর বাড়িতে পাঠান। শনিবার বনদপ্তরের কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হল ছোট্ট রকিকে। বনদপ্তরের কর্মীরা জানান, তাঁরা রকিকে শ্যামপুরের ৫৮ গেট রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা করাবেন এবং সেখানেই তাকে প্রকৃতির মধ্যে বড় করে তুলবেন। সুজিতবাবু যখন রকিকে তার দুধের বোতল-সহ বনদপ্তরের কর্মীদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন তখন রকির দু’চোখ বেয়ে নেমে আসছিল অশ্রুধারা। চিকচিক করে উঠেছিল সুজিতবাবুর চোখের কোন। তিনি কাঁপা-কাঁপা গলায় বলছিলেন বিদায় রকি, বিদায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.