সুব্রত বিশ্বাস: মন উচাটন। প্রেমিকের হাত ধরে স্বামীর ঘর ছাড়তে চেয়েছিল। আর তাই মাথায় এসেছিল স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনা। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। তবে নিজে হাতে নয়, বলিউড স্টাইলে সুপারি কিলার দিয়ে কাজটা করাতে চেয়েছিল বেলুড়ে আশুতোষ হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত স্ত্রী কুমকুম। পুলিশি জেরায় কুমকুম জানিয়েছে, নিজের গয়না বেচে সুপারি কিলার ভাড়ার টাকা জোগাড় করে প্রেমিকের হাতে তা তুলে দিয়েছিল।
[দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী’কে আঘাত, তিনি বাঁচলেও আত্মঘাতী স্বামী]
একেবারে পরিকল্পনামাফিক সুপারি কিলারের সহযোগিতায় তিনজন মিলে খুন করে আশুতোষ মালিককে। রবিবার ভোরে বেলুড় হাউসিং এস্টেটের পাশের জঞ্জালের ভ্যাট থেকে যুবকের জ্বলন্ত দেহ উদ্ধারের পর তদন্তে নেমে পুলিশ পরিকল্পিত খুনের বিস্তারিত জানতে পারে। আশুতোষের স্ত্রীর প্রেমিককে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেফতার করলেও এখনও সুপারি কিলারের খোঁজ মেলেনি। পুলিশের জেরায় কুমকুম মালি জানিয়েছে, বছরখানেক আগে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে দিল্লির সুমন কুমারের সঙ্গে তার আলাপ হয়। ফেসবুকে চ্যাট ও ফোনে প্রেম জমে ওঠে। এক সময় দিল্লি থেকে বেলুড়ে চলে আসে সুমন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আশুতোষ কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকত। সেই সময় বাড়ি ফাঁকা। পাঁচ বছরের সন্তানকে কাকু পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ত সুমন। চলত অবাধ মেলামেশা। আশুতোষের চেয়ে বয়সে ছোট হওয়ায় সুমনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে কুমকুম। সন্ধে হলে হাওড়া, বালি স্টেশনে হকারির কাজ করত সুমন। রাত কাটাত স্টেশনে। আর সকালে কুমকুমের আলিঙ্গনে গা ভাসিয়ে সারাদিন কাটিয়ে যেত প্রেমিকার বাড়িতেই। কিন্তু শেষপর্যন্ত ছেলের মুখ থেকে ‘কাকু’-র কথা জানতে পেরে যান আশুতোষ। স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি চরমে ওঠে।
[ সোশ্যাল মিডিয়ায় বাড়ছে স্বতন্ত্র নির্বাচনের হিড়িক, এখনই ফল জানতে ব্যাকুল নেটিজেনরা]
এদিকে ততদিন নাছোড় প্রেমে মজেছে সুমন ও কুমকুম। একে অপরকে ছাড়া থাকাটাও অসহ্য হয়ে উঠেছিল। শেষমেশ স্বামীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে দু’জনে। গয়না বেচে প্রেমিকের হাতে টাকা তুলে দেয় কুমকুম। দিল্লির ছেলের সুমনের বেলুড়ে তেমন পরিচিত ছিল না, প্রেমিকার স্বামীকে খুন করতে ভাড়াটে খুনির সাহায্য নেয় সে। শনিবার রাতে পরিকল্পনা মাফিক আশুতোষের খাবারে বিষ মিশিয়ে রাখে কুমকুম। খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে, মোবাইলে প্রেমিক ও ভাড়াটে খুনিকে ডেকে পাঠায় সে। হাত-পা বেঁধে প্রথমে আশুতোষের বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর বস্তাবন্দি দেহ ফেলে আসা হয় ওই জঞ্জাল ফেলার জায়গায়। তারপর কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে আশুতোষের সঙ্গে বিয়ে হয় কুমকুমের। বড় বাজারে একটি কাপড়ের দোকানের কর্মী আশুতোষ। বড়বাজারে বাবার কাছে থাকতেন। বিয়ের পর বেলুড় পালপাড়া ভাড়া বাড়িতে চলে আসে। জেরায় এসব তথ্য জেনে আঁতকে উঠছে খোদ পুলিশই৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.