শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: সর্বোচ্চ আদালত রায় দিলেও কাজটা খুব সহজ ছিল না জলপাইগুড়ি নয়াবস্তি পাড়ার সুব্রত চক্রবর্তীর পক্ষে। পরিচিত কিংবা প্রতিবেশীরা কী বলবেন এই নিয়ে মনের মধ্যে একটা দোনোমনা ভাব ছিলই। তবে ছেলের ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত ছেলের পাশেই দাঁড়ালেন সুব্রত বাবু। ছেলের পছন্দকে সম্মান জানিয়ে রূপান্তরকামী পাত্রীর সঙ্গেই ছেলের বিয়ে দিলেন তিনি৷ কিন্তু যা আশঙ্কা করেছিলেন তার ঠিক উলটো চিত্রই ধরা পড়ল বিবাহবাসরে।
[মোবাইল অর্ডার দিয়ে এল সাবান, রাগের মাথায় এ কী করলেন ব্যক্তি!]
ঘটনার কথা জানাজানি হতেই কানাঘুষো কথা বললেন না কেউই৷ বরং, দু’হাত তুলে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করে গেলেন পাড়া-প্রতিবেশীরা৷ বুধবার বৌভাত তাই সকলকেই ছেলের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানালেন সুব্রত চক্রবর্তী৷ জানা গিয়েছে, দু’বছর আগে বিটেক পড়তে কলকাতায় এসেছিলেন সুব্রতবাবুর ছেলে সাগ্নিক। এখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় দক্ষিণ দিনাজপুরের চকভৃগু থেকে কলকাতায় আসা, পেশায় মডেল অনীক দত্ত-র৷ দু’জনের বন্ধুত্ব হয়৷ ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব পরিণত হয় প্রেমে৷ মনে মনে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে মনে করলেও বিষয়টিকে সামাজিক রূপ দিতে পারছিলেন না তাঁরা৷ ডাক্তারের সাহায্য নিয়ে অস্ত্রোপচার করে অনীক দত্ত রূপান্তরিত হন অ্যানিতে৷ রবিবার রাতে পরিণতি পেল তাঁদের প্রেম৷ চার হাত এক হল জলপাইগুড়ির সাগ্নিক চক্রবর্তী ও অনীক দত্ত ওরফে অ্যানির।
[উদ্ধার গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ, হত্যার অভিযোগ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে]
তবে বিয়ের পর্বটা যতটা সহজ ছিল, শুরুর পর্বটা ছিল ততটাই কঠিন। বিষয়টি জানাজানি হতেই প্রথমে ভ্রূ কুচকায় সাগ্নিকের পরিবার৷ ২৩ বছরের ছেলের সঙ্গে রূপান্তরকামী মেয়ের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি অনেকেই৷ কিন্তু ছেলে সাগ্নিকের পাশে দাঁড়ায় বাবা সুব্রত চক্রবর্তী। বিয়ের ব্যবস্থা করেন তিনি৷ সুব্রত চক্রবর্তী জানান, ”ভগবান ওকেও মানুষ করে পাঠিয়েছে। আমাদের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ব থাকে তবে এই ধরনের কাজ আরও অনেকেই করতে পারেন। আমি প্রথমে জানতাম না। পরে জানতে পেরে এই সিদ্ধান্ত নিই।” বর্তমানে কর্মসূত্রে দু’জনেই শিক্ষকতা করেন। অ্যানি বালুরঘাটে এবং সাগ্নিক ময়নাগুড়িতে। বিয়ের পর কর্মস্থল যাতে এক জায়গায় হয় সেই চেষ্টাই করবেন বলে জানিয়েছেন দু’জনেই৷ গত দু’বছর খুব সুন্দর কেটেছে তাঁদের, আশা করেন আগামী বছরগুলিও একই ভাবে কাটবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.