সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: ছেলের মৃত্যুর পরও বৃদ্ধ দম্পতিকে ছেড়ে যাননি পুত্রবধূ। বরং মেয়ে হিসেবে কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাবা-মায়ের দায়িত্ব। তাই বাবা-মা ও পালন করলেন কর্তব্য। দাঁড়িয়ে থেকে পুত্রবধূর বিয়ে দিলেন শ্বশুর। নিজেই করলেন সম্প্রদান। বরের হাতে যৌতুকও তুলে দিলেন দুর্গাপুরের ডিপিএল কলোনির বণিক মোড়ের বাসিন্দা অজয় শাসমল।
বছর সাতেক আগে অজয়বাবুর বড় ছেলে উত্তমের সঙ্গে বিয়ে হয় মেদিনীপুরের দেবশ্রী মাইতির। তাঁদের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে। একটি দুর্ঘটনায় পেশায় ট্রাক চালক উত্তমের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। আঘাতের জেরে মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। চিকিৎসা চলতে চলতেই বছর তিনেক আগে অবসাদে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন উত্তম। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পরও বাপের বাড়ি না গিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যান দেবশ্রী। মেয়ের মতো শ্বশুর ও শাশুড়ির দেখাশোনা করেন দেবশ্রী। স্বাভাবিকভাবেই কন্যাসম পুত্রবধূর এই পরিণতি মেনে নিতে পারছিলেন না ওই অজয়বাবু। সেই কারণেই পুত্রবধূর ফের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাসমল দম্পতি। এরপর অনুমতি নিতে ওই বধূর পরিবারের সদস্যদের কাছে বিষয়টি জানান। তাদের অনুমতি মিলতেই শুরু হয় পাত্র খোঁজা।
অজয়বাবুর এক সময় পরিবহণের ব্যবসা ছিল। তার বাস চালাতেন সন্তোষ লায়েক নামে এক যুবক। এখন তিনি ছোট গাড়ি চালান। সেই সন্তোষের সঙ্গেই পুত্রবধূর বিয়ে দেবেন বলে মনস্থির করেন। রাজি হয়ে যান সন্তোষও। তারপরই বুধবার দুর্গাপুরের একটি কালীবাড়িতে চার হাত একহাত করার সিদ্ধান্ত নেন অজয়বাবু। এদিন বিয়ে উপলক্ষে কালীবাড়িতে ঢল নেমেছিলো অতিথিদের। সেখানে ছিলেন দেবশ্রীর মা মিত্রা মাইতি। সাধ্যমতন পাত্রের হাতে যৌতুক হিসাবে কুড়ি হাজার টাকা,সোনার গয়না ও একটি বাইক তুলে দেন অজয়বাবু। মিত্রাদেবী জানান,“ মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন তার বাবা অজয়বাবুই। তিনি মেয়ের ভালো মন্দ বোঝেন। তিনিই যখন পাত্রস্থ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন আমাদের আপত্তির কোনও কারণ থাকতেই পারেনা।” খুশি দেবশ্রীও। তবে বিয়ের পর নতুন শ্বশুরবাড়ি নয় ‘বাবা’র কাছেই থাকতে চায় সে। বিয়ের পর আশ্বস্ত অজয়বাবু জানান,“ মেয়েকে নতুন জীবন দিতে পেরে ভাল লাগছে। সুস্থ সবল শান্তিপূর্ন জীবন কাটাক বাকি সময়।”
ছবি: উদয়ন গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.