Advertisement
Advertisement

গুরুত্ব হারাচ্ছে কলম, লাইব্রেরিতেই সংগ্রহশালা মালদহের যুবকের

টিকে থাকুক কলমের সভ্যতাও।

Man makes pen museum in Malda
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 28, 2018 7:10 pm
  • Updated:July 29, 2018 11:21 am  

বাবুল হক, মালদহ: সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে যাতে হারিয়ে না যায় কলম! সুবীরবাবুর এমন আরজি হয়তো কেউ শুনবেন না। ই-গভর্ন্যানস চালু হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরগুলিতে। এখন ‘পেপারলেস’-এর পথে বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাগুলিও। মোবাইলেই টাইপ করে বন্ধুদের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছেন সবাই৷ ফলে দিনের পর দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে হাতের লেখনী অর্থাৎ কলম। না, কলম কখনও হারাতে দেওয়া যাবে না, এই লক্ষ‍্যেই লেখনী নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন সংগ্রহশালা৷

আধুনিক প্রযুক্তির জমানায় কলম যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য পাঁচশোর’ও বেশি পুরোনো ও নতুন কলম মজুত করে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন পুরাতন মালদহ ব্লকের বাসিন্দা সুবীরকুমার সাহা। পেশায় ওল্ড মালদহের বাণীভবন টাউন লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান সুবীরবাবু। ওই লাইব্রেরিতেই নিজের উদ্যোগে কলমের একটি সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন তিনি। শুধু কলম নয়, পুরানো দিনের বিভিন্ন রকমের কয়েন এবং বহু পুরনো বই ও সংবাদপত্র তাঁর সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে। রয়েছে পুরোনো দিনের দেশলাইয়ের বাক্সও৷ তবে, বিশেষভাবে তিনি কলমের উপরই জোর দিয়েছেন৷ কলমের এই সংগ্রহশালার প্রচার ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় কৌতূহলীদের ভিড় বাড়ছে পুরতন মালদহের মঙ্গলবাড়ির বাণীভবন টাউন লাইব্রেরিতে। সুবীরবাবু জানান, এই সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে খাগের কলম, পাখির পালকের কলম, ময়ূরের পালকের কলম, পাটকাঠির কলম, ফাউন্টেন পেন, বলপেন, স্কেচ পেন, এমনকী দোয়াতও৷

Advertisement

এছাড়াও রং-বেরংয়ের হরেক রকমের কলম সংগ্রহশালায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে৷ মান্ধাতার আমলে ব্যবহৃত কলম থেকে আজকের যুগে ব্যবহৃত আধুনিক পেন, সবই ঠাঁই পেয়েছে এই সংগ্রহশালায়। বিগত কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে এই কলম সংগ্রহ করার নেশায় যুক্ত রয়েছেন গ্রন্থাগারিক সুবীরকুমার সাহা। এছাড়াও পুরোনো দিনের এক আনা, দুই আনা, পাঁচ পয়সা, দশ পয়সা-সহ বিভিন্ন ধরনের কয়েন মজুত করেছেন তিনি। এজন্য ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর রাজ্যের একজন সেরা লাইব্রেরিয়ান হিসাবে পুরাতত্ত্ব পরিষদের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল সুবীরবাবুকে। তাঁকে সেই সময় নির্মলচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারও দেওয়া হয়েছিল৷

নবদ্বীপের পুরাতত্ত্ব পরিষদ এই পুরস্কারটি দিয়েছিল তাঁকে। কেন তাঁর কলমের প্রতি এমন আকর্ষণ এবং কলম সংগ্রহের নেশাই বা কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সুবীরকুমার সাহা বলেন, ‘‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রাচীন লেখন নিয়ে খুব কম মানুষ মানুষ চিন্তাভাবনা করেন। ‌এখন যা হচ্ছে সবই কম্পিউটার আর অত্যাধুনিক মোবাইলে। টাইপ থেকে ভার্সন তৈরি হয়ে যাচ্ছে। কলমের ব্যবহার ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে। যেভাবে আদিম মানুষ থেকে আধুনিক সভ্যতায় মানুষ পৌঁছে গিয়েছে, ঠিক সেইভাবেই একদিন কলমের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু সেই কলমের প্রয়োজনীয়তার স্মৃতি ধরে রাখতে চাইছি। কলমকে মানুষের কাছে তুলে ধরতেই এই সংগ্রহশালা তৈরি করেছি। কাজের ফাঁকে দেশ-বিদেশে যেখানেই যাই না কেন, কোথাও কোন নতুন ধরণের কলম দেখলেই তা সংগ্রহ করি। আমি চাই আগামী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও যেন কলমকে ভুলে না যায়। কম্পিউটার, মোবাইল, অ্যাপস সবই থাকুক। আর তার মাঝে টিকে থাকুক কলমের সভ্যতাও।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement