Advertisement
Advertisement

Breaking News

Child

মেয়ে হওয়ার ‘শাস্তি’! আছড়ে মারল বাবা, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু কন্যাসন্তানের

বাবার 'নৃশংসতায়' শিউড়ে উঠছেন সকলে।

Man kills infant daughter at Bagnan, Howrah after his expectation of son not fulfilled | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:March 4, 2022 8:35 pm
  • Updated:March 4, 2022 8:37 pm  

মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: শ্বশুড়বাড়ির দাবি ছিল, ছেলে হোক। কিন্তু বউমার কোল আলো করে এল মেয়ে। জন্ম হল বটে, কিন্তু তারপরের ইতিহাস শুধুই অযত্নের আর অবহেলার। এমনভাবেই তবু ছোট্ট প্রাণ বেড়ে উঠছিল সময়ের নিয়মেই। সইল না মদ্যপ বাবার। অভিযোগ, তুলে আছাড় মারল মাটিতে। একরত্তি তখন বেহুঁশ। মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারায় সে। নিয়ে যাওয়া হল চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক জানালেন, করতে হবে এমআরআই (MRI)। এমনিতেই যে চক্ষুশূল, মরে গেলেই ভাল হয়, তার আবার এমআরআই! টাকা দিলই না বাবা। একেবারে বিনা চিকিৎসায় পৃথিবীর চোদ্দ মাসের মায়া ত্যাগ করে চিরতরে চোখ বুঝল সে!

সিনেমা, সিরিয়াল, নাটকের গল্প নয়। নির্ভেজাল বাস্তব। কঠোর, রুক্ষ, স্নেহহীন দুনিয়ার আরও একটা দৃষ্টান্ত। আমতার কুশবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁকুড়া এলাকা। সেখানেই বাস পাল পরিবারের। প্রসেনজিৎ পালের সঙ্গে বছর তিনেক আগে বিয়ে হয়েছিল বাগনান (Bagnn) এক নম্বর ব্লকের বাইনান গ্রাম পঞ্চায়েতের মাইতি পাড়ার বাসিন্দা তনুশ্রী পালের। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুড়বাড়ির দাবি যেন ছেলে হয়। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে খবর, ছেলে না হয়ে মেয়ে হওয়ায় অশান্তি তীব্র আকার নেয়। পারিবারিক অশান্তির কারণে মেয়েকে নিয়ে তনুশ্রী মাঝেমধ্যেই বাপের বাড়িতে চলে আসতেন। গত দু’মাস ধরে তিনি বাপের বাড়িতেই থাকছিলেন। তনুশ্রী বলেন, “শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছে ছিল আমার ছেলে হোক। কিন্তু মেয়ে হওয়ায় প্রথম থেকেই ওরা অসন্তুষ্ট ছিল। মেয়ের খাওয়ার দুধ ঠিকমতো কিনত না। চিকিৎসার খরচও দিত না। মদ খেয়ে সব টাকা উড়িয়ে দিত। প্রতিবাদ করলেই মারধর করত।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত শেন ওয়ার্ন]

কিছুদিন আগে শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কিত এক আত্মীয় মারা যান। তখন মেয়েকে নিয়ে সেখানে যান তনুশ্রী। অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ি যেতেই শিশুটিকে তনুশ্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন তাঁর ননদ। তনুশ্রী প্রতিবাদ করলে প্রসেনজিৎ ছেলেকে নিয়ে সটান মাটিতে আছাড় মারে। এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই শিশুটি অচৈতন্য হয়ে পড়ত। তনুশ্রী ও তাঁর বাপের বাড়ির লোকেরা শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তার সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করতে বলেন চিকিৎসক।

তনুশ্রী মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রেও যায়। তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি প্রসেনজিৎ ও তাঁর পরিবারকে জানালেও কোনও সহযোগিতা মেলেনি। প্রয়োজনীয় টাকাপয়সা দেওয়া দূরের কথা, এমআরআই করার জন্য ‘বন্ড’-এ সই করতেও প্রসেনজিৎ অস্বীকার করে বলে তনুশ্রীর অভিযোগ। পরীক্ষা না করিয়েই মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসেন তনুশ্রী। বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটি আবার অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তনুশ্রী তাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় যান। সেখানকার বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন প্রসেনজিৎ বা তার পরিবার যাতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন শেষপর্যন্ত কথা বললেও তাতে কোনও লাভ হয়নি।

[আরও পড়ুন: ভাবা যায়! তিন বোনকে একই সঙ্গে বিয়ে করে বসলেন ‘সাহসী’ যুবক! তারপর…]

রাত ন’টা নাগাদ তনুশ্রী মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর রাত দশটা নাগাদ শিশুটি ফের অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তাকে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশুটিকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা। বাগনান থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। স্ত্রীর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে প্রসেনজিৎ বলেন, “ওরা আমার বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করে। তা সত্ত্বেও আমি আর্থিক সহায়তা করতাম। মেয়ের অসুস্থতার খবর আমার জানা নেই। বৃহস্পতিবার তারা এখানে এসেছিল। মেয়ে সুস্থ ছিল বলেই দেখেছি। তারপর রাত্রিবেলা খবর পাই, মেয়ে মারা গিয়েছে।” কিন্তু মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরও তিনি কেন যাননি, সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি প্রসেনজিৎ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement