ছবি: প্রতীকী
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রাতে স্ত্রীকে ভিডিও কল করেছিলেন। কিন্তু সেই বিষয়টি স্ত্রী শ্বশুরবাড়ির কাউকে কিছুই জানাননি। পরদিন সকালে ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের খবর পান বাবা-মা। আর এই ঘটনায় বউমাকেই দায়ী করছেন তাঁরা। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির একটি ভাড়া বাড়িতে শনিবার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় কলানবগ্রাম সার্কেলের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপস মণ্ডল (২৯)-এর। মেমারি থানার পুলিশ দরজা ভেঙে উদ্ধার করে মেমারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। এদিন রাত পর্যন্ত লিখিত কোনও অভিযোগ গায়ের হয়নি। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
খবর পেয়ে এদিন বেলায় মেমারি থানায় আসেন মৃতের বাবা তারক মণ্ডল ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। তারকবাবু বলেন, “১১ মাস আগে প্রাথমিক শিক্ষিকার সঙ্গে ছেলের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই বউমা বাপের বাড়িতেই থাকত। ছেলে আনতে গেলেও আসতে চাইত। আমরা পরে জানতে পারি এলাকার একজনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বউমার। সেই কারণেই ছেলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। এই মর্মান্তিক কাণ্ড ঘটিয়েছে।” তিনি জানান, দিন সাতেক আগে বউমা তাঁদের বাড়িতে এসে থাকছিল। তিনি বলেন, “ছেলে যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বউমা জানত। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বউমাকে ভিডিও কল করে ঝুলে পড়তে যাচ্ছে তা দেখিয়েছিল। কিন্তু বউমা সেই সময় আমাদের কিছুই জানায়নি।”
তারকবাবুরা আফশোস করছিলেন, বউমা যদি তাঁদের বিষয়টি জানাত তাহলে তাঁরা তাপসকে বুঝিয়ে নিরস্ত করতে পারতেন। কিন্তু সেটা হল না। পুলিশ তাপসবাবুর মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করেছে। তাতে বেশ কিছু মেসেজ পয়েছে পুলিশ। তাপসবাবু রাতে তাঁর স্ত্রীকে শেষ যে মেসেজটি পাঠিয়েছিলেন তাতে লেখা রয়েছে, “আমার মুখ আর তোমায় দেখতে হবে না।” প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, স্ত্রীর প্রতি অভিমান করে আত্মঘাতী হয়েছেন তাপসবাবু। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাপসবাবুর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বাদুলিয়া থানায় সিমলিয়া গ্রামে। কর্মসূত্রে মেমারি পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। ১১ মাস আগে বাদুলিয়ার চাঁদপাড়ার বাসিন্দা পেশায় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকার লাবণী মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।
মেমারির ভাড়াবাড়িতে পাশের ঘরেই থাকেন মেমারি সার্কেলের প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক ভজন ঘোষ। তিনি জানান, এদিন সকালে মেমারি-১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও উজ্জ্বল সর্দার একাধিকবার তাপসবাবুর মোবাইলে ফোন করেন। রিং হলেও ফোন ধরেননি। তখন তিনি ভজনবাবুকে ফোনে বিষটি বলেন। তাঁকে খোঁজ নিতে বলেন তাপসবাবুর ঘরে গিয়ে। ভজনবাবু গিয়ে তাপসবাবুর ঘরে ধাক্কাধাক্কি করলেও কোনও সাড়া পাননি। তখন জানালা ঠেলে দেখেন সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছেন তাপসবাবু। গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো। খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। ভজনবাবু জানান, কোনওিন ব্যক্তিগত কোনও সমস্যার কথা তাপসবাবু তাঁদের জানাননি। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নায়ারণচন্দ্র পালও যান ঘটনাস্থলে। সহকর্মীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শিক্ষা দপ্তর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.