ছবি: প্রতীকী
সৌরভ মাজি ও চন্দ্রজিত মজুমদার: পরপর কন্যাসন্তান। তার জন্য স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালাতই স্বামী। এমনকী খুনেরও চেষ্টা করে। কিন্তু নিজের সন্তানকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে আছড়ে মারতে পারে বাবা তা কল্পনারও অতীত। বাবার এমনই পাশবিক আচরণের শিকার হয়েছে এক দুধের শিশু। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের সালার থানার সরমস্তিপুরের পূর্ব পাড়ায়।
গত বৃহস্পতিবার বাবা আব্বাস আলি স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির পর ছয় মাসের কন্যা ফারহা সুলতানাকে মায়ের কোল থেকে তুলে আছাড় মারে। তাকে প্রথমে কান্দি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিনই সেখান থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার তাকে বর্ধমানে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন রাতেই সেখানে মৃত্যু হয় তার। ঘটনার বিষয়ে সালার থানার অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত শিশুর মা সেলিনা বিবি ওরফে আমেনা। তার ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ জানিয়েছে. অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি।
[পরকীয়ায় ইতি টানায় ধারালো অস্ত্রের কোপ গৃহবধূকে, পলাতক অভিযুক্ত প্রেমিক]
এদিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন সেলিনার মা জেলেহারি বিবি ও কাকা মনিরুল শেখ। তাঁদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানা এলাকায়। তাঁরা জানান, কয়েকবছর আগে আব্বাসের সঙ্গে বিয়ে হয় সেলিনার। বছর দেড়েকের একটি কন্যা রয়েছে তাদের। পরে আরও একটি কন্যাসন্তান হয়। এরপর থেকেই আব্বাস স্ত্রীর উপর অত্যাচার শুরু করে বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। জেলেহারি বলেন, “আমার মেয়ে বোবা। তারপর দুই কন্যাসন্তান হওয়ায় জামাই মেয়ের উপর অত্যাচার শুরু করে। ঠিকমত খেতেও দিত না। মেয়েরা অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসাও করাত না। কয়েকদিন আগে আমার মেয়েকেও গলা টিপে খুন করার চেষ্টা করেছিল আব্বাস।” মনিরুল জানান, গত বৃহস্পতিবার সামান্য বিষয় নিয়ে অশান্তি শুরু করে আব্বাস। মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলেছিল সেলিনা। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সেলিনার কোল থেকে ওই শিশুকে তুলে আছাড় মেরে দেয় আব্বাস। একজন বাবা এমন কাজ করতে পারে বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁরা।
[সৌদিতে দুর্ঘটনায় বাঙালি যুবকের মৃত্যু, শোকের ছায়া গোপালনগরে]
সালার পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা এলাকার বাসিন্দা তপন শেখের কথায়, “আব্বাস আলি ও তার পরিবার খুবই গরিব। পরের জমিতে ভাগ চাষের কাজ করে সংসার চলে। পরপর দুটি কন্যাসন্তান হওয়ায় ও অভাবের সংসারে খরচ জোগাড় করতে না পেরে প্রায়ই ওদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হত। আমি শুনেছি শিশুকন্যার চিকিৎসার জন্য ওদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। তারপরেই মায়ের কোলে থাকা ফারহা সুলতানাকে ওর বাবা ছিনিয়ে নিয়ে মাটিতে আছড়ে ফেলে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে আব্বাস। রবিবার মেয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। আব্বাস আলির এখন মনস্তাপ হচ্ছে। সে বলে, “আমি মারাত্বক ভুল করেছি। আমি বুঝতে পারিনি এত বড় ক্ষতি হবে আমার। আমি শুধু অভাবের কথা ভেবে পাগল ছিলাম। আমি রাগের মাথায় করেছি। আমি কন্যাসন্তান হওয়ায় রেগে ছিলাম ঠিকই। কিন্তু মারতে চাইনি। আমার যা সাজা হবে হোক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.