সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্কঃ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত৷ মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে এদেশেই খুন হয়েছেন এমএম কালবুর্গি, গৌরী লঙ্কেশ৷ সন্দেহের বসে এখানেই গো-রক্ষকদের রোষানলে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে৷ এই নগ্ন মানসিকতার উত্তাপ থেকে বাদ পড়েনি এরাজ্য৷ সেজন্যই চলন্ত ট্রেনে শিক্ষিতের ধ্বজাধারী চার যুবকের মারধরের মুখে পড়তে হল এক মুসলিম যুবককে৷ তাঁর দোষ, প্রথমত তিনি কম শিক্ষিত৷ দ্বিতীয়ত বা গুরুতর দোষ, দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম বলতে পারেননি তিনি, বলতে পারেননি ভারতের জাতীয় সংগীতের নাম৷ ফলে চলন্ত ট্রেনেই তাঁর উপর চলল অত্যাচার৷
[টাকা নিয়ে হিন্দুত্বের প্রচার? স্টিং অপারেশনে তোলপাড় খবরের দুনিয়া]
কেবল মারধর করেই ক্ষান্ত থাকেনি মুখোশধারী শিক্ষিত চার অভিযুক্ত৷ সমস্ত বিষয়টি ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দিয়েছিল ফেসবুকে৷ ভেবেছিল বাহবা পাবে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা সম-মনোভাবাপন্নদের৷ হয়তো পেয়েছেও তাই৷ তবে, তাদের খেয়াল ছিল না ফেসবুকে রয়েছে উদারপন্থীদেরও একটা অংশ৷ আর এটাই কাল হল তাদের৷ তড়িৎবেগে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই ভিডিও৷ নিন্দার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে৷ ঘটনাটি ঘটেছে, গত ১৪ মে৷ হাওড়া থেকে মালদহের কালিয়াচকে নিজের বাড়িতে যাচ্ছিলেন ওই যুবক৷ ট্রেনের ওই একই কামরাতেই ওঠে চার যুবক৷ নিরীহ যুবকটিকে পেয়ে তাঁকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে অভিযুক্তরা৷ প্রশ্ন তালিকায় ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী? যুবকটি অনেক ভেবে জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ব্যাস! তাতেই আরও তেলেবেগুনে জ্বলে যায় ওই চার অভিযুক্ত৷ কটূবাক্যের সঙ্গে ওই যুবককে থাপ্পড় মারতে দেখা যায় তাদের৷ এরপর আবার যুবকটিতে প্রশ্ন করা হয় দেশের জাতীয় সংগীত কী? নিজের কম শিক্ষিত হওয়ার কথা স্বীকার করে নেন ওই যুবক৷ উত্তর দিতে পারেন না তিনি৷ আরও বাড়তে থাকে চার অভিযুক্তের অত্যাচার ও কটূক্তির পরিমাণ৷ আর পুরোটাই রেকর্ড করা হয় মোবাইলে৷
[পনেরো দিনে এক লক্ষ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চার বছরের খতিয়ান শোনাবে বিজেপি]
জানা গিয়েছে, পরে ওই চার অভিযুক্ত ব্যান্ডেল স্টেশনে নেমে যায়৷ সংখ্যালঘু যুবকটি উদ্ধার করে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ নামে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ যুবককে নিয়ে কালিয়াচক থানায় যান তাঁরা৷ ওই চার অজ্ঞাতপরিচয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় অভিযোগ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই চার অভিযুক্তের খোঁজে তদন্ত শুরু করা হয়েছে৷ এখানে একটা প্রশ্ন উঠছে, এমন তো অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা শিক্ষিত সমাজও জানি না৷ আর যখন যুবকটি নিজের কম শিক্ষিত হওয়ার কথা স্বীকার করেই নিয়েছেন তখন তাঁর দোষটা কোথায়?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.