দেবব্রত মণ্ডল: মুখ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে গ্রাস। জিভে লেগে আছে মানুষের রক্তের স্বাদ। আর তাই পুনরায় রক্তের স্বাদ পেতে সারারাত দাপাদাপি করল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)। হুংকার আর গর্জনে কেঁপে উঠল চিতুরির জঙ্গল। বাঘের আক্রমণে তটস্থ হয়ে থাকল গ্রামবাসীরা। বাঘের আক্রমণের খবরে পুরো গ্রাম এতটাই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকলো যে কোন পুরুষ মানুষ কে বাইরে দেখা গেল না বাইরে। পরে অবশ্য বনদপ্তরের কর্মীরা গিয়ে বাঘটিকে গভীর জঙ্গলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ।
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানার দেউলবাড়ি গ্রামে। একদিকে সুন্দরবনের গভীর চিতুরির জঙ্গল। অন্যদিকে দেউলবাড়ি গ্রাম। মাঝে মাতলা নদীর শাখা শিকারি খাল। প্রতিদিন এই খাল পেরিয়ে মানুষ যাতায়াত করেন চিতুরি জঙ্গলে। কাঁকড়া বা মাছ ধরতে শনিবারও উপস্থিত হয়েছিল এক মৎস্যজীবী। তারপর সেখানেই তাঁকে বাঘ আক্রমণ করে। মৃত্যু হয় ওই মৎস্যজীবীর। নিহতের নাম গোষ্ঠ নাইয়া।
সঙ্গীদের চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা গিয়ে বাঘের মুখ থেকে লড়াই করে ছাড়িয়ে আনেন ওই মৎস্যজীবীকে। গ্রামবাসীরা যখন জঙ্গলে ঢুকে নিহত মৎস্যজীবীকে বাঘের গ্রাস থেকে উদ্ধার করতে যায় তখন দেখা যায় অর্ধেক খাওয়া অবস্থায় বাঘ নিজের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছে দেহটি। মানুষের চিৎকারে দেহটি ছেড়ে দিয়ে কিছুদূর এগিয়ে অপেক্ষা করছিল দক্ষিণরায়। এমনকি দেহ-সহ মৎস্যজীবীদের নৌকার পিছু নেয় ক্ষুধার্ত বাঘ, এমনটাই জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এরপর রাতের অন্ধকার নামতেই বনদপ্তর ফেন্সিং কেটে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে সে।
শুধু গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছে তাই নয়, হুংকার গর্জন আর দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ করে তুলেছে এলাকা। জঙ্গল আর গ্রামের মধ্যে মেরেকেটে একশো ফুট দূরত্ব। ফলে বাঘের দাপাদাপিতে ঘুম ছুটে যায় গ্রামের মানুষদের। খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরের কুলতলি রেঞ্জ অফিসে। সেখান থেকে বনদপ্তরের কর্মীরা দু’টো ভুটভুটি নিয়ে রওনা দেন এলাকায়। বাজি ও পটকা ফাটিয়ে বাঘটিকে গভীর জঙ্গলে ফেরত পাঠায়।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী লিচু নাইয়া বলেন, “বাঘের হুংকারে সারারাত বাড়ির বাইরে বেরতে পারিনি। প্রচণ্ড আতঙ্কে আছি। কারণ ঝড়ের পরে ঘরবাড়ির অবস্থা একদম ভালো নেই। তার ওপর তার মুখ থেকে খাবার কেড়ে আনায় আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে বাঘটি। অন্যদিকে, বনি ক্যাম্পে শনিবার বিকালে একটি বাঘের দেখা পাওয়া যায়। বনদপ্তরের কর্মীদের থাকা অফিসের মধ্যেই ঢুকে পড়ে বাঘটি। পরে বনকর্মীরা তাকে জঙ্গলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.