Advertisement
Advertisement

Breaking News

Purba Medinipur

‘ভিকি ডোনার’ হতে গিয়ে ফাঁদে পা! নিঃস্ব তমলুকের যুবক

শুধুমাত্র স্পার্ম ডোনেট করেই খুব সহজে মিলবে ২৫ লক্ষ টাকা!

Man duped of lakhs in Purba Medinipur, cops launch probe। Sangbad Pratidin
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:November 3, 2023 9:24 pm
  • Updated:November 3, 2023 9:28 pm  

সৈকত মাইতি, তমলুক: শুধুমাত্র স্পার্ম ডোনেট করেই খুব সহজে মিলবে ২৫ লক্ষ টাকা! গভীর রাতে সোশাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগারের এমনই একটি লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখেই আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি এক যুবক। দুর্গাপুজোর মুখে তাই এক সঙ্গে এতগুলো টাকা পাওয়ার আশায় নিজের স্পার্ম ডোনেট করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ফোন করেই বিপদ ডেকে আনেন তিনি। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে খোয়ালেন ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।      

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত ময়না থানার অন্তর্গত এলাকার যুবক গণেশ বাগ। গ্রামের স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠন শেষে নিজের কর্মসংস্থানের আশায় পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে সোনার কাজে। বর্তমানে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি সোনার দোকানের কারিগর। বছর সাতেক আগেই দেখাশোনা করে তাঁর বিয়ে হয়। বাড়িতে বাবা মায়ের সঙ্গেই স্ত্রী সোনালি ও বছর পাঁচেকের একমাত্র পুত্র সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন তিনি। আর কর্মসূত্রে বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরেই স্ত্রী পুত্রকে ছেড়ে থাকতে হয় গণেশকে। তবুও মোটের উপর সংসারটা ভালোই চলছিল। পুজোর আগে সোনার কাজের হিড়িকে উপার্জনও হচ্ছিল ভালো। কিন্তু ফেসবুকের এমন একটা লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে একরকম ভিমরি খেয়ে পড়েন বছর ৩৩-এর এই যুবক।    

Advertisement

গণেশের দাবি, ১ আগস্ট রাতে এই বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়ে তাঁর। সোশাল মিডিয়ার এই বিজ্ঞাপনে স্পার্ম ডোনেটে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নগদ ২৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার টোপ দেওয়া হয়েছিল। যেখানে একটি নির্দিষ্ট ফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। আর সেই ফোন নম্বরেই নিজের এই ইচ্ছা প্রকাশ করে ফোন করেন তিনি। তার পর থেকেই  শুরু হয় প্রতারণা।

[আরও পড়ুন: ‘বীরভূম জেলার বুকে জোড়া ফুল ছাড়া কিছু থাকবে না’, চব্বিশের ভোটে লড়াইয়ের হুঙ্কার কাজল শেখের

প্রতারিত যুবকের অভিযোগ, ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা প্রতারণা চক্রের সদস্যরা একাধিকবার ফোন করে এই কাজের জন্য অগ্রিম ৫ লক্ষ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে বলেও জানায়। গণেশের স্পার্ম সংগ্রহ করার জন্য দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু কাজের চাপে দিল্লি যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানালে ওই দলের সদস্যরা অন্ধ্রপ্রদেশের ঠিকানাতে এসে স্পার্ম সংগ্রহতে সম্মতি দেয়। আর তার জন্য একটি বিশেষ পরিচয় পত্র তৈরীর ক্ষেত্রে ১১৯৯ টাকা চাওয়া হয়। সেই টাকা খুশি মনেই ফোন পে-র মাধ্যমে প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে পাঠান গণেশ। এর পরেই আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা এবং আরও একটি চার চাকা গাড়ি উপহার করা হবে বলেও জানানো হয়।

স্বাভাবিক কারণে প্রতারকদের এমন লোভনীয় অফারে রাতারাতি হাতে চাঁদ পাওয়ার মত অবস্থা তৈরি হয় গণেশের। এদিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই অগ্রিম বাবদ গণেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ ৫ লক্ষ টাকা পাঠানোর যাচ্ছে না বলে ফোন আসে। এক্ষেত্রে তাই সম্পূর্ণ টাকা ফোন পে-র মাধ্যমে পাঠানোর জন্য আরও ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে সেই টাকাও খুশি মনে পাঠিয়ে দেন গণেশ। আর তার পরেই ষড়যন্ত্রকারীরা গণেশকে একটি ভিডিও কলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খতিয়ে দেখার কথা বলেন। এই কাজে অবশ্য ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা এক যুবতীকে নগ্ন শরীরে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি গণেশের। এসবের পর ওই যুবতী স্পার্ম ডোনেট করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত বলে গণেশকে ক্লিনচিট দেয়। এর পর ধাপে ধাপে কখনও জিএসটি বাবদ, কখনো সার্ভিস প্রবলেম আবার কখনও পুলিশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে প্রতারকরা।

[আরও পড়ুন: সামাজিক মাধ্যমে যুবতীর অশ্লীল ছবি পোস্ট, চেন্নাই থেকে গ্রেপ্তার অসমের যুবক

এভাবেই ধাপে ধাপে সর্ব সাকুল্যে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে ফেলেন গণেশ। কিন্তু তারপরেও আরও ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দাবি করে অভিযুক্তরা। আর সেই টাকা না দিতে পারায় একের পর এক হুমকি ফোন আসতে শুরু করে। অভিযুক্তরা গণেশের নগ্ন ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এমন অবস্থায় প্রতারিত হয়েছেন বুঝে তড়িঘড়ি করে সপ্তমীর রাতে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বাড়ি ফিরেই তমলুক সাইবার থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন যুবক গণেশ। ইতিমধ্যেই তার অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে প্রতারিত ওই সোনার কারিগর গণেশ বলেন, মোটের উপর উপার্জন ভালো হলেও সোনার দামের উত্থান পতনের মধ্যে এই পেশা অনেকটাই অনিশ্চিত। তাই একপ্রকার লোভে পড়েই আজ এই সর্বস্বান্ত দশা। ওরা আমার নগ্ন শরীরের ছবি পুলিশের এবং সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ভয় দেখাতো। আর আমিও লজ্জা অপমানের হাত থেকে রক্ষা পেতে তাই বাধ্য হয়েই এতগুলো টাকা দিয়ে ফেলেছি। এ বিষয়ে সাইবার পুলিশের এক আধিকারিক এর দাবি, দুষ্কৃতীরা একের পর এক এমন কৌশল ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। তাই অনলাইন প্রতারণার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা পেতে পুলিশের অভিযানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ জনকেও আরো বেশি করে সজাগ সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, অভিনব কায়দায় সাইবার প্রতারণার এমন একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement