বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: সমকামী যৌনতায় বাধা দেওয়াই কি কাল হল গয়েশপুরের বাসিন্দা ভাস্কর রামের? দুই বন্ধুর সমকামী যৌন চাহিদায় বাধা দেওয়ায় জেরেই কি গলা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল ত্রিশূল? পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুই ছাত্রনেতাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে প্রকৃত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সূত্রের খবর, ত্রিশূলবিদ্ধ যুবক সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য মজার মজার ভিডিও বানাতেন। এই ঘটনার সঙ্গে সেই ভিডিও বানানোর কোনও যোগ রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাস্কর রামের গলায় ত্রিশূল ঢুকিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়ার ঘটনায় বিক্রম সরকার এবং জয় বণিক নামে ২ যুবককে গ্রেপ্তার হয়। ভাস্করকে কেন খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল তা জানতে দফায়-দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। জেরায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রের খবর, রবিবার রাতে ভাস্করের বাড়িতে নিজেদের সমকামী যৌন ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়েছিল অভিযুক্ত দুজন। মূলত তা নিয়েই বচসা বাঁধে। ভাস্কর সমকামিতায় বাধা দিয়েছিলেন। তাই কি তারই বাড়িতে রাখা ত্রিশূল গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়? ত্রিশূলবিদ্ধ অবস্থায় ভাস্কর প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি করেন। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। যদিও সেখানে গলা থেকে ত্রিশূল বার করতে না পারায় রাতেই ওই যুবককে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
এদিকে ধৃত দুজন সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের গয়েশপুর এলাকার সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক পদে রয়েছেন। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, ভাস্করের বাড়িতে বন্ধু হিসাবে যাতায়াত ছিল বিক্রম ও জয়ের। রবিবার রাতেও তারা ভাস্করের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিন বন্ধুর মধ্যে বচসা বাঁধে। ভাস্করের ঘরেই রাখা ছিল একটি ত্রিশূল। অভিযোগ, রাগবশত সেই ত্রিশূল ভাস্কর রামের গলায় ঢুকিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া হয়। পুলিশ রবিবার রাতেই অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
ভাস্করের প্রতিবেশী মধু বিশ্বাস জানিয়েছেন,”ভাস্কর একাই থাকে। কর্মসূত্রে সকালে বাড়ি থেকে বের হয় এবং রাতে বাড়িতে ঢোকে। রাতে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব আসে। তারা খাওয়াদাওয়া করে বেরিয়ে যায়। তারা রাতে ঘরে আর কী করে,সেটা আমার জানা নেই।” ভাস্করকে নিজের দাদার মতই শ্রদ্ধা করেন প্রতিবেশী সুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনিই ভাস্করের কথামত বিক্রম এবং জয়ের নামে ভাস্করকে খুনের চেষ্টা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সুপর্ণা সেনগুপ্ত জানিয়েছেন,”আমি চাই, আমার দাদাকে যারা খুনের চেষ্টা করেছে, তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। দাদা বিক্রম এবং জয়ের নাম বলে গিয়েছেন। প্রকৃতই কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য বের হোক। তাতে যদি আমার দাদারও কোন দোষ থাকে,তবে তারও শাস্তি হোক।”
যদিও ডিওয়াইএফআইয়ের গয়েশপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক জয় হালদারের বক্তব্য,”বিক্রম এবং জয় দুজনেই জানিয়েছে,তারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের ফাঁসানো হয়েছে। তবে আমরা চাই, আইন আইনের পথে চলুক। যারাই দোষী হোক, তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.