দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের পেটে গিয়েছেন মা। কয়েকদিনের তল্লাশিতেও দেহের হদিশ মেলেনি। তাই নিয়ম মেনে মায়ের কুশপুতুল দাহ করলেন ছেলেরা। রীতি অনুযায়ী হল শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও। শনিবার ঘটনার সাক্ষী থাকলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের গোসাবা থানার আমলামেথির পূর্বপাড়ার বাসিন্দারা। যদিও জলে কুমির, ডাঙায় বাঘের সঙ্গে বসবাস করা সুন্দরবন লাগোয়া বাসিন্দাদের কাছে এই নিয়ম নতুন নয়।
সোমবার সকালে মেজো ছেলে-সহ তিন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের পিরখালির জঙ্গল থেকে কাঁকড়া ধরার জন্য বাড়ি থেকে বের হন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বাসিন্দা বনলতা তরফদার। আচমকা তাঁদের নৌকায় আক্রমণ করে একটি বাঘ। প্রাণে বাঁচতে কোনওক্রমে নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দেন বনলতাদেবীর সঙ্গীরা। কিন্তু আতঙ্কে নৌকা থেকে নামতে পারেননি বনলতাদেবী। খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ ও বনদপ্তর। কিন্তু একদিন কেটে গেলেও তাঁর দেহ মেলেনি। এরপরই বৃহস্পতিবার নিয়ম মেনে বনলতা দেবীর কুশপুতুল বানিয়ে দাহ করা হয়। তাঁর একদিন পর শনিবার অনুষ্ঠিত হল তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।
জানা গিয়েছে, মৃতার স্বামী গৌর তরফদার শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই সংসারের দায় ছিল বনলতাদেবীর কাঁধেই। দীর্ঘদিন ধরেই প্রাণ হাতে নিয়ে কাঁকড়া আর মাছ ধরেই সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু সোমবার ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি। মেজো ছেলে স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে মহিলাকে টেনে নিয়ে যায় বাঘ। চোখের সামনে মাকে বাঘের কবলে পড়তে দেখেও কিছুই করতে পারেননি তিনি। সেই ভয়ংকর দৃশ্য যেন এখনও তারা করে বেড়াচ্ছে তাঁকে। তাঁর কথায়, “চোখের সামনে বাঘ মাকে নিয়ে গেল। কিন্তু কিছু করতে পারলাম না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.