মেয়েকে নিয়ে পথশিশুদের সঙ্গে মৃত স্ত্রীর জন্মদিন পালন করছেন দেবাশিস ভট্টাচার্য।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: এবারের জন্মদিনটা একটু অন্যভাবে পালন করবেন।বাড়িতে কেক কেটে বা হোটেলে ভিন্ন স্বাদের খাবার খাওয়া সেই তালিকায় থাকবে না। বছরের গোড়াতেই স্বামীকে জানিয়েছিলেন বর্ধমানের শিল্পী আরাধনা ভট্টাচার্য। সেই মতোই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন ভট্টাচার্য দম্পতি। বর্ধমান স্টেশন চত্বরের পথশিশুদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করবেন আরাধনাদেবী। কিন্তু নিয়তির পরিহাস। মারণ রোগ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে জন্মদিনের ঠিক একমাস আগে চলে গেলেন শিল্পী আরাধনা। কিন্তু স্ত্রীকে হারিয়েও তাঁর শেষ ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন স্বামী। মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই তাই স্ত্রীর ইচ্ছেপূরণ করলেন। স্ত্রীর জন্মদিনে পেটপুরে খাওয়ালেন পথশিশুদের।
এদিন শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দপ্তরে গিয়ে সেই সব পথশিশুদের নতুন পোশাক দিয়ে এলেন আরাধনাদেবীর স্বামী দেবাশিস ভট্টাচার্য ও তাঁর মেয়ে অরাত্রিকা ওরফে রানিয়া। মিষ্টিমুখও করানো হল। প্রায় সারাটা দিনই বাবা-মেয়ে পথশিশুদের সঙ্গেই কাটিয়ে দিলেন। এত আদর যত্ন পেয়ে ওই শিশুরা দেবাশিসবাবু ও রানিয়াকে দিনভর গান শুনিয়ে, গল্প করে মাতিয়ে রাখল। কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলিয়ে দিল স্বজন হারানোর বেদনা।
স্ত্রীর জন্মদিন কাটিয়ে ফেরার পথে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দেবাশিস ভট্টাচার্য। বলেন, “আমার স্ত্রী থাকলে খুবই খুশি হতেন। এদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করতেন। মেয়েকে নিয়ে এখানে জন্মদিন পালন করে স্ত্রীকে দেওয়া কথা রাখতে পেরেছি।”
জানা গিয়েছে, মারণ রোগ ক্যানসারে ভুগছিলেন স্ত্রী। এটা অনেকদিন বাদেই জানা যায়। স্বামী-স্ত্রী ও এক মেয়ের সংসারে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা ভোগ করে গত ১৬ অক্টোবর আরাধনাদেবীর মৃত্যু হয়। ইচ্ছে অনুযায়ী বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ত্রীর দেহ দান করেন দেবাশিসবাবু। জন্মদিন পালনের ইচ্ছেটা মনের মধ্যে লালন করে রেখেছিলেন। দিনটা আসতেই আর দেরি করেননি, পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে পরলোকগত স্ত্রীকেই ভালবাসা জানালেন দেবাশিসবাবু।
ছবি:মুকুলেসুর রহমান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.