দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: তিন সপ্তাহের মধ্যে পানিহাটিতে (Panihati) যুবক খুনের কিনারা। খুনে জড়িত অভিযোগে নিহত যুবকের স্ত্রী, স্ত্রীর বান্ধবী ও তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করল শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। ত্রিকোণ প্রেমের জেরেই ওই যুবক খুন হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। চলতি মাসের ২ তারিখ শ্রীরামপুরের বাঙিহাটিতে দিল্লি রোডের ধারে একটি নর্দমা থেকে মুন্ডুহীন যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হুগলি জেলার বিভিন্ন থানা-সহ পার্শ্ববর্তী জেলার থানাতেও মুন্ডুহীন দেহের ছবি পাঠিয়ে শনাক্তকরণের চেষ্টা করে। কুড়ি,বাইশ দিন পরে পানিহাটিতে মৃত ব্যক্তির ঘাড়ের কাছে একটি ট্যাটু দেখে তার পরিবার মৃতদেহ শনাক্ত করে। জানা যায়, মৃতের নাম শুভজ্যোতি বসু। বয়স ২৫ বছর।
ছেলের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের মা বেবি বসু। তিনি জানান, ১ মে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে খড়দহ থানা থেকে শুরু করে উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর (Serampore) থানার দ্বারস্থ হলেও কোনওরকম সহযোগিতা পাননি। তাঁর অভিযোগ, ছেলের স্ত্রী পূজা রায়ের লাগামছাড়া জীবনযাপনে শুভজ্যোতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে তাকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয়েছে।
উত্তরপাড়ার (Uttarpara) পূজা রায়ের সঙ্গে চলতি বছরের ১৩ মার্চ শুভজ্যোতির বিয়ে হয়। বিয়ের সাতদিনের মাথায় পূজা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে উত্তরপাড়ার হিন্দমোটরে বান্ধবী শর্মিষ্ঠা ভাস্করের বাড়িতে এসে ওঠে। শর্মিষ্ঠার স্বামী সুবীর অধিকারী পেশায় ট্রাকচালক। স্ত্রীর বান্ধবী শর্মিষ্ঠার প্রতি আকৃষ্ট হন শুভজ্যোতি। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি অরবিন্দ মেনন আনন্দ জানান, শুভজ্যোতি শর্মিষ্ঠাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। যে কারণে ঈর্ষা ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে শর্মিষ্ঠার স্বামী সুবীর শুভজ্যোতিকে খুন করে। খুনের আগে মৃতের স্ত্রী পূজা, শর্মিষ্ঠা ও সুবীর রীতিমতো ছক কষেছিল। তিনজনকে গ্রেপ্তারির পর খুনের ঘটনার জট খুলে ফেলেন তদন্তকারীরা।
পরিকল্পনামাফিক ১ মে শুভজ্যোতিকে ফোন করে উত্তরপাড়ায় ডেকে পাঠানো হয়। এরপর সুবীর তাকে কোন্নগরে গঙ্গার ধারে একটি ইটখোলায় নিয়ে গিয়ে মদ খাওয়ায়। তারপর ধারালো চপার দিয়ে শুভজ্যোতির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। প্রমাণ লোপাটের জন্য মুন্ডু গঙ্গায় ফেলে দেয় খুনি। তারপর মৃতদেহ প্লাস্টিকে মুড়ে একটি সাইকেল ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে শ্রীরামপুরে দিল্লি রোডের ধারে একটি নর্দমায় ফেলে দেয়। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ তদন্তে নেমে পূজা রায়, বান্ধবী শর্মিষ্ঠা ভাস্কর ও তার স্বামী সুবীর অধিকারীকে সোমবার হিন্দমোটরের একটি বাড়ি থেকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সুবীর বরানগর থানার একটি কেসে দীর্ঘদিন সংশোধনাগারে ছিল। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পায়। ধৃত তিন জনকে মঙ্গলবার শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে একা সুবীরের পক্ষে খুন করার পর মৃতদেহ সাইকেল ভ্যানে করে প্রায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলা কি সম্ভব? পাশাপাশি স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূজার উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh)যাতায়াত ছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন পানশালার সঙ্গে পূজার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশের দাবি, ধৃত দুই মহিলাই হোম মেকার। তবে স্থানীয়রা দাবি করেছেন, ওই মহিলারা যে ধরনের বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। একজন হোম মেকারের পক্ষে অর্থের যোগান না থাকলে এই ধরনের বিলাসবহুল জীবনযাপন করা সম্ভব নয় বলে দাবি তাদের। তাই ধৃত মহিলাদের ব্যক্তিগত জীবনের গতিবিধি নিয়ে পুলিশ কিছু বলতে চায়নি। তবে এই খুনের পিছনে আরও কোনও বড় রহস্য লুকিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ মৃতের মাথা উদ্ধারের জন্য গঙ্গায় তল্লাশি চালাবে বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.