জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: নিত্যই লেগে থাকত দাম্পত্য অশান্তি। স্বামী, স্ত্রী – একে অপরের বিরুদ্ধে প্রায়শয়ই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ আনতেন। একেবারে চরমে উঠেছিল অশান্তি। শেষমেশ স্ত্রীকে শায়েস্তা করতে স্বামী ভাড়াটে খুনিদের (Contract Killer) ভাড়া করে। তারপর তাদের দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করানোর পর খুনের অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। বনগাঁর (Bongaon) পেট্রাপোল এলাকায় এই ঘটনায় শিউড়ে উঠছেন মানুষজন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্বামীকে। বাবার এহেন আচরণের কথায় ক্ষিপ্ত নাবালক পুত্র ফাঁসির দাবি তুললেন।
বাঁশবাগানের মধ্যে মাটিতে পড়ে আছে মহিলার মৃতদেহ গলায় ওড়না ফাঁস জড়ানো। মহিলাকে এই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামের মানুষ। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। ঘটনাটি পেট্রাপোল থানার জয়ন্তীপুর এলাকার৷ পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, মৃতের নাম ফতেমা মোল্লা। ধৃত স্বামীর নাম সামিউল মোল্লা। তদন্তে নেমেই পুলিশ বুঝতে পারে, এই কাজে ভাড়াটে খুনিদের নিয়োগ করেছিল স্বামী। মহিলাকে খুনের আগে ধর্ষণ (Rape) করা হয়েছিল।
পরিবার সূত্রে খবর, বছর ১৮ আগে গোপালনগর থানার মেহেরপুরের ফতেমা সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জয়ন্তীপুরের সামিউলের। তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। বছর পনেরোর এক ছেলে ও বছর তেরোর একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের উপর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ আনত এবং তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে বিবাদ চলত। গত দোসরা মার্চ রাতে মহিলা নিখোঁজ হয়ে যায়। পরদিন সকালে জয়ন্তীপুর এলাকার কাঠাল বাগানে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের পাঠায়। ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে পুলিশ স্বামী সামিউলকে আটক করে৷ জেরায় পুলিশ জানতে পারে, স্বামী ভাড়াটে দুষ্কৃতী ব্যবহার করে মহিলাকে খুন করেছে৷ এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার সকালে বনগাঁ মহকুমা আদালতে পাঠিয়ে ৮ দিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, খুন করার দিন ফতেমাকে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। মহিলা ওই এলাকায় যেতেই একটি কলা বাগানের মধ্যে নিয়ে তাঁর গলায় ওড়না জড়িয়ে ফাঁস দেয় অভিযুক্ত। পুলিশের অনুমান, খুন করার আগে মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। মৃত মহিলার ভাই শফিউল বলেন, ”আমার বোনের উপর নিয়মিত অত্যাচার করত৷ আমার বোনকে খুন করেছে জামাইবাবু। এই ঘটনায় তার সঙ্গে আর কারা যুক্ত আছে তা পুলিশ নিশ্চয়ই তদন্ত করে বার করবে।”
ছেলে সাদ্দাম মোল্লা বলেন, “রাতে মা নিখোঁজ হওয়ার পর বাবাকে থানায় অভিযোগ করতে বলেছিলাম, করেননি। মৃতদেহ উদ্ধারের পর বাবা অভিযোগ করতে চাইছিলেন না। তখনই বাবার উপর সন্দেহ হয়েছিল৷ আমি চাই আমার বাবার ফাঁসি হোক। কারণ আর কেউ যেন তার স্ত্রীকে এভাবে হত্যা না করতে পারে৷” বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, “স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই কাজে সে দুষ্কৃতীদের নিয়োগ করেছিল বলে জানা গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে৷ মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই স্পষ্ট হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.