আইনজীবীর সঙ্গে মৃতের ভাই
নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: আদালত থেকে লোপাট হয়ে গিয়েছে খুনের মামলার নথি। কেন এবং কীভাবে তা লোপাট হল, তার উত্তর নেই কারও কাছে। এরই মধ্যে গত জুলাই মাসে বনগাঁ আদালতের অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে দাদার খুনের বিচার চেয়ে আবেদন করেন মৃতের ভাই। তার ভিত্তিতে এই খুনের মামলার তদন্ত নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দেন বিচারক দেবাশীষ সাঁতরা। এই খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির বারাসত সাংগঠনিক জেলার নেতা ও বনগাঁর ভূমিপুত্র দেবদাস মণ্ডল।
১৯৯৯ সালের ৪ নভেম্বর গভীর রাতে খুন হন বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সূর্যশংকর রায়চৌধুরি নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। পরদিন সকালে স্থানীয় একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। এরপরই বনগাঁ থানায় স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের ভাই সিদ্ধার্থশংকর রায়চৌধুরি। অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে বনগাঁ থানার পুলিশ। খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এই মামলার প্রধান আসামী ছিলেন বর্তমান বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল।
কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে ২০১৫ সালের পর থেকে ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া পুরোপুরি থমকে যায়। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে বনগাঁ আদালতের জেনারেল রেকর্ড সেকশন থেকে অদ্ভুতভাবে উধাও হয়ে যায় মামলার যাবতীয় নথি। গত জুলাই মাসে মৃতের আর এক ভাই সৌমেন্দ্র রায়চৌধুরি দাদার খুনের বিচার চেয়ে আবেদন করে এসিজেএম দেবাশীষ সাঁতরার কাছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে নথিপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। আগস্টের ২০ তারিখ শুনানির দিনও ধার্য্য করেন।
এরই মধ্যে বনগাঁ থানার আই সি মানস চৌধুরি আদালতের রেকর্ড সেকশন থেকে গোপনে তদন্তের হারিয়ে যাওয়া নথিপত্রের কিছু অংশ থানায় নিয়ে যান। এর ফলে বিচারকের ভৎর্সনার মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। এমনকী দায়িত্ব থাকা জেনারেল রেকর্ড আধিকারিককে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেন পুলিশ কর্তারা। এই টালবাহানার মধ্যেই সঠিক বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানায় মৃতের পরিবার। অভিযুক্ত দেবদাস মণ্ডল অবশ্য এই ঘটনাকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেছেন।
এপ্রসঙ্গে সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘ওই সময় পুলিশ ও আদালতের একাংশের যোগসাজশে মামলার নথিপত্র লোপাট করা হয়। সঠিক তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য সামনে আসবে। ন্যায্য বিচার পাবে মৃত যুবকের পরিবার।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.