স্টাফ রিপোর্টার: একশো দিনের প্রকল্পে মজুরির টাকা সরাসরি কর্মীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে পাঠানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাল রাজ্য৷ অবিজেপি রাজ্যগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাশাপাশি কেন্দ্রের ‘অবহেলা’র জবাব দিতে অভিনব কায়দাও নিয়েছেন তিনি৷ বুধবার জরুরি বিশেষ বৈঠকে পঞ্চায়েত ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ২৫টি দফতরকে একশো দিনের কাজে সর্বোচ্চ কত টাকা বরাদ্দ করা সম্ভব, সে ব্যাপারে আলাদাভাবে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে৷ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব দফতরকে সেই রিপোর্ট অর্থ দফতরে জমা দিতে হবে৷
কতটা টাকা একশো দিনের কাজে রাজ্য একাই খরচ করতে পারে, তার হিসাব নেবে অর্থ দফতর৷ স্পষ্ট, কেন্দ্রকে এড়িয়ে রাজ্য নিজেই একশো দিনের প্রকল্পের কাজ করবে৷ কর্মসংস্থান দেওয়া হবে গরিব মানুষকে৷ তবে বাম সরকারের দেনা ও সীমিত কোষাগার থেকে এর কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আধিকারিক মহলে৷ কারণ, বছরে সাড়ে চার হাজার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা একশো দিনের প্রকল্পের জন্য খরচ হয়৷
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে এদিনও বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্যের অর্থ দফতরকে এড়িয়ে বা বাইপাস করে টাকা দেওয়া হবে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন৷ রাজ্যের স্পষ্ট বক্তব্য, এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ নবান্নে বৈঠকে পঞ্চায়েত ও সংশ্লিষ্ট সব দফতরের মন্ত্রী-সচিবরাও ছিলেন৷ প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক ও প্রয়োজনে অর্থ মন্ত্রকেও চিঠি দেবেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ও মুখ্যসচিব৷ অবিজেপি রাজ্যগুলিকেও চিঠির কপি পাঠানো হবে৷ বৈঠকের পর রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত৷ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত৷ যতদূর সম্ভব প্রতিবাদ করা হবে৷”
আগে একশো দিনের প্রকল্পের টাকা সরাসরি রাজ্যের অর্থ দফতরে আসত৷ সেখান থেকে পঞ্চায়েত ও সংশ্লিষ্ট দফতর মারফত কর্মীদের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউণ্টে টাকা চলে যেত৷ কয়েকদিন আগে কেন্দ্র এক নির্দেশে সব রাজ্যকেই জানায়, একশো দিনের প্রকল্পের টাকা আর রাজ্যের অর্থ দফতরে জমা দেওয়া হবে না৷ বরং জেলার মাধ্যমে কর্মীদের অ্যাকাউণ্টে যাবে৷ রাজ্যের আপত্তি এখানেই৷
১৯ অক্টোবর থেকে রাজ্যের অর্থ দফতরে সেই টাকা আসছে না৷ রাজ্য মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রশাসনের ‘মেরুদণ্ড’ অর্থ দফতরের মাধ্যমে টাকা পাঠানোই নিয়ম৷ সেটা না হওয়া মানে বিধানসভাকেও অবমাননা করা, কারণ রাজ্যের বাজেট বিধানসভায় পেশ করেন অর্থমন্ত্রী৷ কোনও পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক না থাকলেও রাজ্য অর্থ দফতরের মাধ্যমে সেই টাকা পৌঁছে দেয় কর্মীদের কাছে৷ নতুন পরিকল্পিত ব্যবস্থায় সেই কর্মীরা সঠিকভাবে টাকা পাবেন না বলে মনে করছেন রাজ্যের আধিকারিকরা৷ সুতরাং শুধুমাত্র ‘পিএম টু ডিএম’ সিস্টেমকে চালু রাখতেই এরকম ব্যবস্থা কেন্দ্র নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্যের আধিকারিকরা৷
আগেও প্রকল্পের নামবদল বা ট্রেজারিতে ‘খবরদারি’ করতে কেন্দ্রের কর্মীদের নিয়োগের বিরোধিতায় প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রতিটি জেলার ট্রেজারি বা ড্রয়িং কাম ডিসবার্সমেণ্ট অফিসার, ডিডিও-র কাজে ‘খবরদারি’ করতেও কেন্দ্রের কর্মীদের পাঠানোর পরিকল্পনা নেয় কেন্দ্র৷ তবে মূলত পশ্চিমবঙ্গের চাপেই সেই পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রেখেছে কেন্দ্র৷
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, “কীভাবে অর্থনৈতিক সংস্কার করা যায়, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আঘাত না আসে, সে ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে৷ কেন্দ্র থেকে একটি পদক্ষেপের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে আঘাত৷ রাজ্যের স্বায়ত্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে৷” রাজ্যের শিক্ষা ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার স্পষ্ট বলেছেন, “এর প্রতিবাদে যতদূর যাওয়ার যাবে রাজ্য৷” যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যকে এড়িয়ে এভাবে কেন্দ্র চলতে পারে না বলেও আক্রমণ করেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.