স্টাফ রিপোর্টার: যে ভোটার লিস্টে বিধানসভা নির্বাচনে ২১১ আসনে জয়, তাতে ব্যাপক কারচুপি করে নতুন লিস্ট তৈরি করা হয়েছে বলে দলীয় বৈঠকে অভিযোগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যে এখন ভোটার লিস্ট সংশোধনের কাজ চলছে৷ সব কাজ ফেলে তৃণমূলের বিধায়কদের সংশোধনীর কাজে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ সোমবার দলের সব বিধায়ককে তৃণমূল ভবনে বৈঠকে ডাকা হয়েছে৷ শুক্রবার কালীঘাটে নীতি-নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে মমতা বলেছেন, আমার ভবানীপুরে এ জিনিস হয়েছে৷ বেছে বেছে তৃণমূলের ভোটারদের বাদ দেওয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রে বিজেপি ও এ রাজ্যে সিপিএমের মদতে ভোটার লিস্টে এই কারচুপি করেছে৷ সারা রাজ্যেই একই চিত্র৷ বস্তুত, বৃহস্পতিবারই সুব্রত বক্সি নির্বাচন দফতরে গিয়ে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন৷
অন্যদিকে, দলীয় বৈঠকে এদিন মমতা ছিলেন চড়া মেজাজে৷ নিজস্ব নেটওয়ার্কে বেশ কিছু অভিযোগ তিনি পেয়েছেন কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে৷ এদিন একেবারে ধরে ধরে তিনি কড়া বার্তা দেন৷ পশ্চিম মেদিনীপুরে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজে এলাকার দুই ব্লক সভাপতি নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আর্থিক দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে৷ সেই প্রসঙ্গ তুলে স্থানীয় মন্ত্রী চূড়ামণি হাঁসদাকে স্পষ্ট বলে দেন, এখনই এই দু’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে৷ পাশাপাশি দলীয় জনপ্রতিনিধিদের তিনি আবারও বলেন, “কোনও সরকারি কাজে কেউ হস্তক্ষেপ করবেন না৷ অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷” আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার সম্প্রতি ডানকুনি টোলপ্লাজায় এক কর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন৷ তাঁকে থাপ্পড়ও মারেন বলে অভিযোগ৷ এদিন বৈঠকে মমতা তাঁকে সাফ বলে দেন, “এত ঔদ্ধত্য কীসের? কোথা থেকে তোমাকে তুলে এনেছি মনে আছে? মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে৷ মাথায় রাখবে দু’লক্ষ মানুষ তোমার বিরুদ্ধে৷ যে জনপ্রতিনিধি এমন আচরণ করবে, তাকে আর ভোটের টিকিটই আমি দেব না৷ নিজেদের শুধরে নাও৷” বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে বলেন, “লাল আলো জ্বালিয়ে যাওয়ার সাহস পাও কোথা থেকে? মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে৷” মুখ্যমন্ত্রীর তোপ থেকে বাদ যাননি বাঁকুড়ার দলীয় সভাপতি অরূপ খাঁ ও বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খানও৷ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে তিনি বলেন, “তোমার মনে রাখতে হবে, শুধু নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের দিকে তাকালে হবে না৷ তুমি গোটা উত্তরবঙ্গের মন্ত্রী৷” গুসকরা পুরসভার গোষ্ঠীকোন্দল সাত দিনের মধ্যে মিটিয়ে নিতে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নির্দেশ দেন মমতা৷ স্থানীয় একটি রাস্তায় টেন্ডার অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ামাত্র পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সব মিলিয়ে এদিনও মমতা দলকে বুঝিয়ে দিলেন দ্বিতীয় ইনিংস কত কঠোর৷ মন্ত্রী-সাংসদদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তৃণমূল এখন জাতীয় দল৷ মানুষের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে৷ ফোন খোলা রাখুন৷ মানুষ কী বলছে শুনুন৷ দলীয় শৃঙ্খলা সর্বস্তরে রক্ষা করতে হবে৷ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.