সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাস ডেস্ক: “ওরা দেবতাকে বিক্রি করছে দাঙ্গা লাগানোর জন্য, বিজেপি দেশের ক্ষতি করছে৷ বাইরে থেকে লোক এনে রাজ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে” কখনও নাম না করে বা কখনও নাম করে জামবনির প্রশাসনিক সভা থেকে এভাবেই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অভিযোগ করলেন, মাওবাদীদের কাজে লাগিয়ে আবারও জঙ্গলমহলে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির এবং টাকার বিনিময়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷ এখানেই শেষ নয় দলের স্থানীয় নেতাদের মানুষের পাশে থাকারও নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷
[‘ভূত’ আতঙ্ক দূর করতে জলপাইগুড়িতে প্রচারে নামল পুলিশ]
সোমবার জামবনির প্রশাসনিক সভায় প্রথম থেকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একের পর এক ইস্যু উত্থাপন করে তিনি আক্রমণ করেন গেরুয়া শিবিরকে৷ অভিযোগ করেন, রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার নেশায় মেতে রয়েছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা৷ সিপিএম-এর সমর্থকরাই জামা পালটে বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, আদিবাসীরা খেতে পায় না, এ কথা তিনি বিশ্বাস করেন না৷ সম্প্রতি শবর পরিবারের সাত সদস্যের মৃত্যু নিয়ে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছিল। সোমবার ঝাড়গ্রামের সভা থেকে বিরোধীদের কড়া জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “ক্ষমতায় এসে আদিবাসীদের বিপিএল তালিকাভুক্ত করে তাদের জন্য ২ টাকা কিলো দরে চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। জঙ্গলমহলের ১০০ ভাগ মানুষের জন্য সেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কেউ যদি বলে এখানে মানুষ খেতে পায় না, আমি বিশ্বাস করি না।”
বস্তুত, লালগড়ের শবর পরিবারের সাত সদস্যের একসঙ্গে মৃত্যু নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও তাঁর দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দেন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। দলীয় নেতৃত্ব দ্রুত শবরদের ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের খাদ্য-বাসস্থান সুনিশ্চিত বলে জানায়। প্রশাসনও একই রিপোর্ট দেয়। সঙ্গে জানায়, শবরদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের পাওনা চাল বিক্রি করে দেয়। সেই টাকায় মদ খেয়ে নেয়। শরীর খারাপের পর হাসপাতালে ভরতি করে দিলেও পালিয়ে যায় শবররা। সেই প্রেক্ষিতেই ঝাড়গ্রামের সভা থেকে তাঁদের পেট ভরে ভাত খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “লালগড়ের আদিবাসীদের জন্য মাসে মাথাপিছু ৮ কেজি চাল ও ৩ কেজি গম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই অনুপাতে পরিবারপিছু চাল-গম মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কেজি খাবার দেওয়া হচ্ছে। আমি জানি চাল ওরা বিক্রি করে দেয়। পেট ভরে ভাত খান। সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন।” সরকারের এই প্রকল্পের কথা গ্রামে গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসীদের জানানোর আবেদনও করেছেন মমতা।
[মৃত মায়ের সঙ্গে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট যুবকের]
একইসঙ্গে আদিবাসীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছড়ানোর দায় যদি তাঁর দলের কারও উপর এসে থাকে, তার দায় সরকার বা তৃণমূল কংগ্রেস নেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘এটা যার দায়, তিনি ব্যক্তিগতভাবেই সেটা মেটাবেন। একইসঙ্গে প্রশাসনকেও হুঁশিয়ার করেছেন, রেশন পেতে আদিবাসীদের কোনও সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লাইসেন্স বাতিল করে দেবে সরকার।’’
সোমবার থেকেই পাঁচদিনের জেলা সফর শুরু করলেন মমতা। কোর কমিটির বৈঠক থেকেই এই সফরের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এই সফরে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সেরে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন বর্ধমান। পশ্চিম বর্ধমান ও দুর্গাপুর সফর সেরে ফিরবেন কলকাতা। এই সফরে একদিকে যেমন প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর, সঙ্গে রয়েছে জনসভাও। সেই সভা থেকে বিভিন্ন খাতে পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.