Advertisement
Advertisement

Breaking News

সিঙ্গুর ভুলে টাটাকে রাজ্যে লগ্নির ডাক মমতার

প্রয়োজনে অন্যত্র জমির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী৷

Mamata invites Tata to Bengal
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 8, 2016 8:55 am
  • Updated:June 23, 2022 7:51 pm  

কিংশুক প্রামাণিক, মিউনিখ: সিঙ্গুরের অভিজ্ঞতা ভুলে টাটা মোটরসকে ফের রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুধবার মিউনিখে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত শিল্প সম্মেলনে দেশ-বিদেশের শিল্পকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন টাটা গোষ্ঠীর দুই সংস্থা, টাটা স্টিলের এমডি টিভি রবীন্দ্রন এবং টাটা মেটালিক্সের এমডি সঞ্জীব পল৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের উদ্দেশ করে রাজ্যে বিনিয়োগের কথা বললেও, আসলে সার্বিকভাবে টাটা মোটরসকেই এই আহ্বান জানিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা জায়গার কথা ভুলে যান৷ অনেক জায়গা আছে৷ সেখানে আপনারা বিনিয়োগ করুন৷” মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সিঙ্গুরের নাম উল্লেখ করেননি৷

বস্তুত, সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠী ১০০০ একর জমি নিলেও ন্যানো কারখানা সেখানে হয়নি৷ প্রকল্পটি তারা গুজরাতের সানন্দে নিয়ে যায়৷ সেই সময় কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলন করছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি টাটাদের শিল্পের বিরোধী ছিলেন না৷ তিনি বলেছিলেন, “শিল্পও হোক, কৃষিও হোক৷” ৬০০ একর জমিতে শিল্প এবং ৪০০ একর জমিতে কৃষি হোক৷ কিন্তু মমতার প্রস্তাব মানা হয়নি৷ রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার গোঁ ধরে বসায় সেই পরিস্থিতিতে টাটা গোষ্ঠীও সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প সরিয়ে নেয়৷

Advertisement

যদিও অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজ্যে টাটা গোষ্ঠীর বিনিয়োগ নিয়ে বা চালু প্রকল্পগুলি নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি৷ এর পর ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর বার্তা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা নিশ্চিন্তেই রাজ্যে ব্যবসা করতে পারেন৷ টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই৷ রাজ্যে অনেকগুলি সংস্থা রয়েছে টাটা গোষ্ঠীর৷ সম্প্রতি টাটা গোষ্ঠীর নতুন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি কলকাতায় এসে জানান, তাঁরা রাজ্যে আরও বিনিয়োগ করতে চান৷ এর পরই সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুর রায় দেয়৷ সেখানে বলা হয়, সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের জন্য পূর্ববর্তী সরকারের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি অবৈধ ছিল৷ শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, সিঙ্গুরের ওই জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে হবে৷ অর্থাৎ, সিঙ্গুরের জমিতে শিল্প হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ জমি কৃষকদের হাতে ফেরত যাবে৷ এই প্রেক্ষিতে মিউনিখে এসে মমতা সেই প্রসঙ্গেরই উল্লেখ করেন৷

উল্লেখ্য, গতকালই মিউনিখে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অটোমোবাইল সংস্থা বিএমডব্লুর সদর দফতরে গিয়েছিল শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল৷ সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে রাজ্যে অটোমোবাইল শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়৷ প্রতিনিধিদলকে বিএমডব্লুর গাড়ি তৈরির কারখানাও ঘুরিয়ে দেখানো হয়৷ দেখা যায়, পৃথিবীবিখ্যাত সংস্থার কারখানাটি মাত্র ১২৪ একর জমির উপর অবস্থিত৷ সেখানেই স্পষ্ট হয়ে যায়, গাড়ি তৈরির কারখানার জন্য ১০০০ একর জমির দরকার নেই৷

এদিকে, এদিন মুখ্যমন্ত্রী টাটা গোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে যেভাবে সিঙ্গুর অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়ার কথা বলেছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে শিল্পমহল৷ অর্থাৎ, ভবিষ্যতে টাটা গোষ্ঠী যদি রাজ্যে গাড়ি শিল্পে বিনিয়োগ করতে চায়, তাতে সব ধরনের সুবিধা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সব দিক ভাবনাচিন্তা করেই টাটাকে রাজ্যে বিনিয়োগে আহ্বান জানানো হয়েছে৷

ক’দিন আগেই টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি বাংলায় বিনিয়োগে রাজ্য সরকারের প্রতি আস্থাব্যঞ্জক মন্তব্য করার পর মিউনিখের শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতার তাঁদের প্রতি এই শিল্প-আহ্বান অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ সিঙ্গুরের জমিতে টাটারা কারখানার তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে ফেলেছিল৷ সেই অবস্থাতেও তারা প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেয়৷ এর পর আট বছর কেটে গিয়েছে৷ এদিকে, সিঙ্গুর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর, কিছু মহলে মনে করা হচ্ছে, সিঙ্গুরকে হয়তো শিল্পেই ব্যবহার করা হবে৷ তেমন কোনও পরিকল্পনা যে সরকারের নেই এবং আদালতের রায় মেনে ওই জমি যে কৃষকদেরই ফেরত দেওয়া হবে, সেটাও এদিন মমতা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, টাটা যদি গাড়ি তৈরির জন্য কারখানা করতে চায়, তার জন্য রাজ্য অন্যত্র তাদের জমি দেওয়া হবে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement