শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: অস্বাভাবিক রকম গাল ফোলা। চোখ-মুখও ফ্যাকাসে। ছাত্রীকে দেখে থমকে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গালে হাত বুলিয়ে আদর করে জানতে চাইলেন কি হয়েছে? ভয়ে ভয়ে নিচু গলায় ছাত্রী জানায়, টিউমার হয়েছে কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ বাবার নেই। নাম জানায় ছবি দেবশর্মা। শেরগ্রাম হাই স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ছাত্রীর কথা শেষ না হতে স্বাস্থ্য সচিব বিবেক কুমার এবং উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনাকে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত কলকাতায় নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন তিনি।
মঙ্গলবার এমনই মানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ। এদিন কলেজের মাঠে সরকারি প্রকল্প পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠানে সবুজসাথী প্রকল্পে স্কুলের ছাত্রীদের সাইকেল বিলি করছিলেন মখ্যমন্ত্রী। সেখানেই হাজির ছিল ছবি। কয়েকজনের পর সে মঞ্চে উঠতে মুহূর্তে আবহ পালটে যায়। ছাত্রীর অস্বাভাবিক রকম ফোলা গাল, ফ্যাকাসে চোখ-মুখ দেখে মুখ্যমন্ত্রীর সন্দেহ হয়। তিনি পড়ুয়াকে কাছে ডেকে নেন। মাথায় হাত বুলি জানতে চান এমন অবস্থা কবে থেকে। ছবি জানায়, ছোটবেলা থেকে। চিকিৎসা হয়নি? মুখ্যমন্ত্রী জানতে চাইলে ছাত্রী মাথা নিচু করে জানায়, বাবা দিনমজুর। পারছেন না।
এরপরই স্বাস্থ্য সচিব বিবেক কুমার এবং উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনাকে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেন তিনি। হতদরিদ্র পরিবারের ওই ছাত্রী শেরগ্রাম হাই স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে এত কাছে থেকে দেখার সুযোগ কোনওদিন হয়নি। তার উপর অকল্পনীয় আশ্বাসে মনপ্রাণ ভরে যায়। মঞ্চ ছেড়ে নামার সময় চোখ ছলছল করছিল তার। ওই অবস্থায় প্রশাসনের কর্তারা ছাত্রীর সমস্ত তথ্য জানতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ছবির বাড়ি কালিয়াগঞ্জের মোহনপুরের সুরশা এলাকারয়। বাবা দীনেশ দেবশর্মা পেশায় দিনমজুর। অনেক কষ্টে মেয়েকে পড়াচ্ছেন। ছবি জানায়, ছোটবেলা থেকে গালে টিউমার। প্রথমে ছোট ছিল। অপারেশন না করার বড় হয়েছে।
বাবা দীনেশ দেবশর্মা বলেন, “দু’বেলা খাওয়া জোটাতে পারি না। মেয়ের চিকিৎসা করব কেমন করে!” স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ দাস জানান, পঞ্চম শ্রেণি থেকে ছবির গালে ফোলা ছিল। ক্রমশ সেটি বড় হয়েছে। মেয়েটি লেখাপড়ায় ভাল। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর পরম শান্তিতে ছবির পরিবার। তার বাবা বলেন, “এমনটা হতে পারে ভাবতে পারিনি।” অবাক ছবিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.