সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০৪ সালে৷ সেই শেষবার৷ তারপর একটা দীর্ঘ সময়ে পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যতম রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা খেজুরিতে জনসভা করেননি তৃণমূল নেত্রী৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনীতির সেই শক্তি জমিতে ফের এসে দাঁড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কাঁথির হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীর সমর্থনে রবিবার খেজুরির হেড়িয়ায় প্রচারসভা করলেন ১৫ বছর পর৷ যথারীতি উঠে এল পুরনো দিনের কথা৷ নন্দীগ্রাম, খেজুরির অশান্ত অধ্যায়কে তুলে ধরে এবার সিপিএম-বিজেপিকে একযোগে তোপ দাগলেন মমতা৷ বললেন, ‘সেদিনের লাল জামা পরা সিপিএম হার্মাদরা, আজ গেরুয়া পরে বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে৷ নিজেদের লাল পতাকা বিক্রি করে দিয়েছে বিজেপির কাছে৷’ দুর্যোধন, দুঃশাসনের সঙ্গে তুলনা করেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহকে৷
এক দশক আগে খেজুরির মাটি আর এরাজ্যে শাসকদলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের বেড়ে ওঠা প্রায় সমার্থক৷ বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম কলঙ্কিত অধ্যায় নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ভিত স্থাপিত হয়েছিল এই এলাকাতেই৷ তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের নজিরবিহীন অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখানকার মানুষজনকে প্রতিবাদে এগিয়ে দিয়েছিলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল৷ ফলে ১৫ বছর পর সেই একই মাটিতে দাঁড়িয়ে বদলে যাওয়া খেজুরির মধ্যেও যে তিনি সেদিনের ছায়া প্রত্যক্ষ করবেন, তা স্বাভাবিক৷ তাই তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই উঠে এল সিপিএম বিরোধিতা৷ এরপরই সিপিএম-বিজেপির গোপন আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হলেন৷
সিপিএম বিরোধিতার পর অবশ্য মোদি বিরোধী চিরাচরিত আক্রমণাত্মক ভঙ্গি তাঁর কণ্ঠে ফিরে আসতে বেশি সময় নিল না৷ বলে উঠলেন, ‘যেভাবে দেশ চলছে, তাতে আর বেশিদিন ভারতের মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না৷ কারণ, নোট বাতিলের মতো একদিন গণতন্ত্রকেও বাতিল করে দেবে মোদিরা৷’ একাধিক ইস্যুতে বিরোধিতার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুললেন, বাংলার নাম বদলের বিষয়টি ৩ বছর ধরে ফেলে রেখেছে দিল্লির সরকার৷ বাংলার একাধিক প্রকল্পের কাজ বাকি৷ তা সত্ত্বেও নির্বাচনী মরশুমে বাংলায় এসে ভোটভিক্ষা করা বিজেপি নেতৃত্বের নির্লজ্জতার নিদর্শন বলে মনে করেন তিনি৷ সেইসঙ্গে চ্যালেঞ্জ, ‘দিল্লির গদিতে আবার বসতে চাইছে৷ দিল্লির গদি এবার আর পাবে না৷ পাবে বাংলার লাড্ডু, যাতে কিসমিস-কাজুর বদলে থাকবে কাঁকর, স্টোনচিপস৷ খাবে আর বুঝতে পারবে বাংলা দখল করতে আসা কত কঠিন৷’ বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ ফের সরব মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘এক হাতে গদা আরেক হাতে তলোয়ার নিয়ে হিন্দু ধর্ম শেখাতে এসেছে৷ এখানে দুর্গাপুজো হয় না বলে যেকথা বারবার বলছেন নরেন্দ্র মোদি, তা ডাহা মিথ্যে কথা৷’
এরপরই কাঁথির প্রার্থী শিশির অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দিল্লি থেকে মোদিকে সরাতে গেলে কাঁথির বর্ষীয়ান, অভিজ্ঞ এই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তার সূচনা করতে হবে৷ দিল্লি দখলে শিশির অধিকারী বাংলাকে পথ দেখাবেন৷ আগামী ১২ মে কাঁথিতে ভোট৷ এখানে চতুর্মুখী লড়াই৷ শেষ হাসি কে হাসবে, তা বোঝা যাবে ২৩ মে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.