দেবব্রত দাস, খাতরা: মরে গেলেও হিন্দুত্ব নিয়ে বিজেপির স্লোগান বেরোবে না মুখ দিয়ে৷ বিজেপি দেবদেবীর নাম বলে অথচ তাঁদের শ্রদ্ধা করে না, তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করে৷ মঙ্গলবার বাঁকুড়া রানিবাঁধে দলের হেভিওয়েট প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে জনসভায় এভাবেই বিজেপিকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘নিজেদের দেশপ্রেমিক বলার আগে উত্তর দিতে হবে নাথুরাম গডসে কে?’ আরএসএসের সঙ্গে কী সম্পর্ক ছিল? দুর্গাপুজো নিয়ে বিজেপির তোপের জবাবে তাঁর পালটা প্রশ্ন, দেবী দুর্গার ক’টা হাত? তাতে কী কী অস্ত্র থাকে? এসব কি বিজেপি নেতাদের জানা?
মাওবাদী দমন নিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব তুলে ধরার জন্য এদিন বাঁকুড়ার মাটিকে যথাযথভাবেই ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বক্তব্যের শুরুতেই বললেন,‘বাম আমলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল মাওবাদী আতঙ্কে কাঁপত৷ আমরা মাওবাদী দমন করে এখানে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি৷ পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এখনও সক্রিয় মাওবাদীরা৷ অথচ সেখানকার বিজেপি শাসিত সরকার এখনও সমস্যা মেটাতে পারছে না৷ বিজেপি শাসিত ছত্তিশগড়েরও একই অবস্থা৷’ অর্থাৎ মাওবাদী দমনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিজেপি যে বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে, সেই দাবিই বারবার করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বাঁকুড়ায় রুখুসুখু মাটিতে জল সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে বেশ প্রাসঙ্গিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রী টেনে আনেন ডিভিসির ভূমিকার প্রসঙ্গ৷ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলাগুলি যেমন গ্রীষ্মে খরাপ্রবণ, তেমনই বর্ষায় বন্যাপ্রবণ৷ তার জন্য ডিভিসির ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তুললেন মমতা৷ ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর অভিযোগ, ‘প্রতিবার ডিভিসি অতিরিক্ত জল ছাড়ে, বাঁকুড়া বন্যায় ভেসে যায়৷ কতবার বলা হয়েছে, ঠিকমত ড্রেজিং করতে৷ বলতে বলতে মুখ ব্যথা হয়ে গেছে৷ কোনও কাজই করে না৷ ডিভিসির জন্যই প্রতিবছর বাঁকুড়া, বীরভূম, হাওড়ায় বন্যা হয়৷’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও দাবি, ‘বাঁকুড়ার অন্যতম বিখ্যাত, ঐতিহ্যের জিনিস বালুচরী৷ তার বিপণনে কে, কবে কাজ করেছে? অথচ আমরা বালুচরীকে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছি৷ ডোকরা, টেরাকোটার বিপণন, উন্নয়নেও কাজ করা হয়েছে৷ এভাবেই জেলার বিভিন্ন প্রসিদ্ধ কুটিরশিল্পকে আমরা তুলে ধরেছি৷’
দিল্লি দখলের লড়াইয়ে এবার বাঁকুড়া থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো এগিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান, অভিজ্ঞ রাজনীতিক তথা রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে৷ ভোট দিয়ে তাঁকে জয়ী করার আবেদন জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘কেন্দ্রে আর নরেন্দ্র মোদি সরকারকে চাই না৷ কারণ, ওরা বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে সবাইকে৷ দেয়নি৷ আচ্ছে দিন আনবে বলেছিল৷ আসেনি৷ বদলে গ্যাস, ডিজেল, পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে৷ নোটবাতিল করেছে৷ এবার ব্যাংকগুলোকেও বাতিল করে দেবে৷ কোনও কাজ করেনি ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে৷ শুধু দাঙ্গা করে বেরিয়েছে৷ ’
অন্যদিকে, বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জেতানোর আবেদনে এক অভিনব উদ্যোগ নিলেন স্থানীয় বিধায়ক৷ রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি মমতা সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে চিঠি লিখে তা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷ ২০১৪ সালের ভোটেও এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার কয়েকজনকে চিঠি দিয়ে ভোটদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেবার সুভাষবাবুর চিঠি পাঠানোর বিষয়টি তেমনভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। কিন্তু এবার তৃণমূল বিধায়কের চিঠি প্রচারে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.