পলাশ পাত্র: লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকে একেবারে জেলাওয়াড়ি ফলাফল পর্যালোচনায় নেমেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার তৃণমূল ভবনে ছিল নদিয়া জেলার পর্যালোচনা বৈঠক৷ সেখানেই জেলার নেতাদের প্রত্যেকের কাছে জবাবদিহি চান তৃণমূল সুপ্রিমো৷ কোথাও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব,তো কোথাও জনসংযোগের অভাবই উঠে এল হারের কারণ হিসেবে৷
এবার রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে হেরেছে তৃণমূল৷ এই কেন্দ্রেই ভোটের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি – ২ লক্ষ ৩৩ হাজারেরও বেশি৷ এই কেন্দ্রের অন্তর্গত শান্তিপুর, গয়েশপুর, কল্যাণী, চাকদহ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে খারাপ ফলাফলের কারণ জানতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শান্তিপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা অরিন্দম ভট্টাচার্য এবং অজয় দে’র মধ্যে বিবাদ বহুদিনের৷ এনিয়ে আগেও একাধিকবার সতর্ক করেছেন দলনেত্রী৷ কিন্তু কাজ হয়নি৷ এদিনও তিনি দু’জনকে দাঁড় করিয়ে কড়াভাষায় কার্যত ভর্ৎসনা করেন৷ নেত্রীর কথায়, ‘দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, তোমরা গণ্ডগোল মিটিয়ে নাও৷ শুনছো না কেন? কেন হার হল?’ এলাকার বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য এবং পুরপ্রধান অজয় দে, দু’জনের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা সকলেই জানেন৷ হারের নেপথ্যে তাঁদের বিবাদকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷
রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধায়ক, নদিয়ার দুই কেন্দ্রে দলের সভাপতি তথা দুঁদে নেতা শংকর সিংকে হারের বিষয়ে মমতা প্রশ্ন করলে তিনি দাঁড়িয়ে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন৷ বলেন, ‘আমরা ঠিকমতো মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারিনি৷ পৌঁছে ঝাঁপিয়ে পড়লে এরকম ফলাফল হতো না৷ আমরা কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম৷ আমাদের এই আচার-আচরণ মানুষ ভালভাবে নেননি৷ আপনার কাজ আমরা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারিনি৷’ এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘তোমরা আয়েশি হয়ে গিয়েছো, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগই নেই৷ উন্নয়নের কাজ পৌঁছে দিতে পারোনি৷’
কৃষ্ণনগরের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহাকে দলনেত্রী হারের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনও জবাব দিতে পারেননি৷ তাঁকে নিরুত্তর থাকতে দেখে মমতা বলেন, ‘এখানে কন্যাশ্রী কলেজ তৈরি করলাম৷ আমি প্রচারে গিয়ে হাঁটলাম৷ আমার যা করার, সব করেছি৷ তোমরা কি কিছুই করোনি? মানুষের সঙ্গে সংযোগই নেই?’
করিমপুর নদিয়া জেলায় হলেও, তা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে৷ সেখানে ১ নং ব্লকের সভাপতির কাছে দলনেত্রী হারের কারণ জানতে চাইলে তিনি স্পষ্টই জানান, ব্লকটির অন্তর্গত করিমপুর ২ নং পঞ্চায়েত সমিতি গঠন হয়নি৷ আর সেটা মানুষের কাছে ভালভাবে পৌঁছায়নি৷ আরেকদিকে, চাকদহ টাউন সভাপতি দীপক চক্রবর্তী এবং বিধায়ক রত্না দে নাগের মধ্যেকার গোষ্ঠীকোন্দলও উঠে এসেছে খারাপ ফলাফলের সমীক্ষায়৷ তাঁদেরও সমস্যা মিটিয়ে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ চাপড়া,কালীগঞ্জ,পলাশিপাড়া,নবদ্বীপ – এইসব কেন্দ্রে ভাল ফল হওয়ায় সেখানকার দলীয় নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.