কিংশুক প্রামাণিক,বিড়লাপুর : এবার লোকসভা ভোটে প্রার্থী হোন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি চাননি। তৃণমূলের ‘স্টার ক্যাম্পেনার’ হিসাবে গোটা রাজ্যে ঘুরতে হবে। সময় পাবেন না নিজের কেন্দ্রে প্রচারে। তাই তিনি ঠিক করেছিলেন, পরে রাজ্যসভায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু বেঁকে বসেন স্বয়ং অভিষেক। তিনি ‘দিদি’কে (ওই নামেই পিসিকে ছোটবেলা থেকে ডাকেন) বলেন, “আমি লোকসভাতেই দাঁড়াব এবং ডায়মন্ড হারবারেই।”
সোমবার নির্বাচনী সভায় এই গোপন কথা তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের কেন্দ্রে এদিন পরপর দুই সমাবেশ করেন তিনি। প্রথমে নোদাখালির বিড়লাপুর ও পরে মেটিয়াবুরুজ। সেখানে একটি পদযাত্রাও করেন। মমতা বলেন, “আমাদের দলে অনেক কর্মী আছে, অভিষেকও এক কর্মী। ও-ই খুব মন দিয়ে যুব সংগঠন দেখে। কেউ মনে করবেন না এই জন্য ও কোনও ফেসিলিটি পায়। আমাদের দলে কয়েকজন স্টার ক্যাম্পেনার আছে। অরূপ, ববি, শুভেন্দু, রাজীব, পার্থদা, বক্সিদা। আজ একটা সত্যি কথা বলি। আমি অভিষেককে বলি, তুই এবার দাঁড়াস না। সারা বাংলা তোকে ঘুরতে হবে। পরে তোকে রাজ্যসভা থেকে নিয়ে যাব। আমার সেই সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ও জানিয়ে দেয়, ডায়মন্ড হারবারেই দাঁড়াবে। সেদিনই বুঝতে পারি ওর এই কেন্দ্রের প্রতি ভালবাসা আছে। ওর সঙ্গে আমার দেখা খুব কম হয়। ফোন করে বলি, কোথায় তুই? দেখি, এলাকায় পড়ে আছে। যেখানেই থাকুক, ডায়মন্ডহারবারে ও আসবেই। ওকে আবার আর্শীবাদ করুন।”
বিজেপি এবার অভিষেককে নানাভাবে টার্গেট করেছে। কড়া জবাব দিয়ে মমতা বলেন, “আমি একা নই। আমাদের ভাই বোনেরা আছে। একসময় সিপিএম পাড়ায় অত্যাচার করত। আমরা তখন বাড়িতেই মিছিল করতাম। আমাদের পরিবারের সবাই রাজনীতি করেন। কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে আসে না, আমি চাই না বলে। এমনকী আমার মা-ও পোস্টারের জন্য আঠা তৈরি করে দিতেন। একজনকেই আমরা রাজনীতিতে অ্যালাউ করেছি। সেটা অভিষেক। ও আমাদের পরিবারে জন্মেছে। এতে দোষ কোথায়? তাই নিয়ে বিজেপির খুব গাত্রজ্বালা, হিংসা। শুধু ওর পিছনে লাগার চেষ্টা করে।” মমতা বলেন, “আমাদের পরিবারের নখের যোগ্য ওরা নয়। পরিবার কাকে বলে নরেন্দ্র মোদি জানেন? উনি তো নিজের বউকেই খেতে দেন না। আমায় আবার ভাতিজাকে নিয়ে গালাগাল করছেন।” মমতা আরও বলেন, “অভিষেকের বউ আছে। সে ভাল করে বাংলা বোঝে না। তাকেও ওরা ছাড়ে না।” মুখ্যমন্ত্রী এদিন আবার বুঝিয়ে দেন, অভিষেকের মতো তরুণদের হাতেই তৃণমূলের পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব তুলে দিতে চান। কলেজ পড়ুয়াদের চান আগামী সময়ের জন্য।
দেড় মাস গোটা রাজ্যে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন অভিষেক। ৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী যখন উত্তরবঙ্গ পৌছন তখন অভিষেক সেখানে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক বলে বাড়তি দায়িত্ব। তার সঙ্গে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাও দেখতে হয়। ফলে নিজের কেন্দ্রে সময় তেমন দিতে পারেননি। শেষপ্রহরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন প্রচারে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দু’টি সভা বিশাল রূপ নেয়। আবার ১৬ই ডায়মন্ডহারবারে সভা করতে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় ছিলেন খুবই আক্রমণাত্মক। তিনি বলেন, “আপনারা একদিন কষ্ট করে ভোটটা দিন। বাকি ৩৬৪ দিন আমার হাতে ছেড়ে দিন। আমি কাজ করব। কোনও অশান্তির রাজনীতি বিজেপিকে ডায়মন্ড হারবারে করতে দেব না।” সাংসদ হিসাবে অভিষেকের পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এদিনের সভায় ছিলেন এলাকার বিধায়ক অশোক দেব, সোনালি গুহ, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্রীমন্ত বৈদ্য প্রমুখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.