কিংশুক প্রামাণিক: বঙ্গ বাণিজ্যে তাদের লগ্নি আরও বাড়াচ্ছে জার্মান সংস্থাগুলি৷ নতুন করে আরও কিছু সংস্থা রাজ্যে বিনিয়োগ করবে৷ মিউনিখে রাজ্য সরকার আয়োজিত শিল্প সম্মেলনের পর সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানালেন অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিবাচক পদক্ষেপ ও সম্মেলনে অসাধারণ আহ্বানের জন্যই জার্মান শিল্পমহলের ব়্যাডারে ধরা পড়েছে বাংলা৷ জানা গিয়েছে, অটোমোবাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, পাওয়ার টুলস, মেশিনারি, সোলার এনার্জি, তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা, লজিস্টিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে বাড়ছে জার্মান লগ্নি৷ এমনকী, ভবিষ্যতে বিএমডব্লু-র মতো সংস্থা যদি কলকাতায় গিয়ে রাজ্যের প্রস্তাবে সাড়া দেয় তাহলেও অবাক হওয়ার থাকবে না৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন কোনও মন্তব্য করেননি৷ তবে সারাদিনই তাঁর কাছে অসংখ্য বার্তা এসেছে জার্মান শিল্পমহল থেকে৷ অমিত মিত্র বলেন, “সংস্থার নাম বলছি না, একজন সিইও যাঁদের কয়েকশো বিলিয়ন ডলার টার্নওভার, তিনি বলছেন যে, আপনাদের মুখ্যমন্ত্রীর অ্যাটিচ্যুড পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহী করে তুলেছে৷ টাটা, রিলায়েন্স থেকে শুরু করে প্রথম সারির বিভিন্ন সংস্থার এমডি-রা শিল্প সম্মেলনে দাঁড়িয়ে রাজ্যে জার্মান বিনিয়োগের কথা বলেছেন, তাতেও কিন্তু ব্যাপক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে৷ এদেশের আরেকজন শিল্পকর্তা বলেছেন, টপ-মোস্ট শিল্পপতিরা এখানে এসে আহ্বান জানালেন সেটা আমরা খুব ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখছি৷”
বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হল, এদিন স্টুটগার্টে ছিল একটি শিল্পসভা৷ যেখানে গিয়েছিল রাজ্যের একটি উচ্চপর্যায়ের শিল্প-প্রতিনিধিদল৷ সেই শিল্পসভায় জার্মানির ৬০টি সংস্থা ছিল৷ তারা প্রত্যেকেই বাংলা সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ অমিতবাবু এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম ২০-৩০টি সংস্থা আসবে৷ কিন্তু এই যে বিপুল সংখ্যক সংস্থা এসেছে, এটাই সাফল্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে৷”
অমিতবাবুকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রাজ্যে কতটা জার্মান লগ্নি হবে? তিনি বলেন, “ওইভাবে তো বলা যায় না, তবে যেভাবে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, যেভাবে শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এক মিনিট ধরে করতালি দিয়েছেন জার্মান শিল্পোদ্যোগীরা, সেটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার৷ এটা আগামিদিনে বাংলা-জার্মানি শিল্প সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করবে৷” তিনি বলেন, “এদিন শিল্পসভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এখন থেকে বিশ্ববাংলার প্রোডাক্টগুলি বার্লিন, মিউনিখ, বন-সহ জার্মানির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে সরকারি-বেসরকারি বিপণিতে পাওয়া যাবে৷ এই ব্যাপারে এদিন একটি চুক্তি হয়েছে৷ বাংলার কুটির ও হস্তশিল্প সম্পর্কে জার্মান শিল্পপতিদের মধ্যে আকর্ষণ তৈরি হয়েছে৷”
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোট্যাচ ইগার্ন-এ তাঁর হোটেলেই ছিলেন৷ তাঁর কোনও কর্মসূচি ছিল না৷ সারাদিনই অবশ্য তিনি লেখালেখি ও অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন৷
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে জার্মানির দক্ষিণ প্রান্তের শহর স্টুটগার্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকারের শিল্প-প্রতিনিধিদল৷ সেখানে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলি নিয়ে সেখানকার শিল্পোদ্যোগী ও উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিল্পকর্তারা৷ স্টুটগার্টের বণিকসভার সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি জার্মানির ক্ষুদ্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন মিউনিখ সফরে আসা বাংলার শিল্পকর্তারা৷ তবে এই প্রতিনিধি দলে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে পারেননি৷ তিনি আচমকা ঠান্ডায় সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ কলকাতাকে ‘ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল’ হিসাবে ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে জার্মান শিল্পপতিদের পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়েছেন, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল৷ আগামী দিনে এইভাবে চলতে পারলে, কলকাতাকে ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল হিসাবে গড়ে তোলা গেলে, সিঙ্গাপুর যে কায়দায় উন্নতি করেছে, বাংলারও সেই পথে অগ্রগতি হবে৷ লাভবান হতে পারবে বাংলা৷ আজ, শুক্রবার কলকাতায় ফেরার বিমানে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিকালে উড়ান৷ যদিও তিনি কলকাতা পৌঁছবেন শনিবার সকালে৷ তাঁর সঙ্গে কলকাতায় ফিরবেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র ছাড়াও মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.