সৌরভ মাজি, বর্ধমান: আজ, বুধবার কন্যাশ্রী দিবস। কলকাতার নজরুল মঞ্চে কৃতী কন্যাশ্রীদের সম্মানিত করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বিভিন্ন জেলার কন্যাশ্রীরা পুরস্কৃত হবে। আর সেখানে এবার পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকে মনোনীত হয়েছে ১১ জন ছাত্রী। প্রশাসন সূত্রে খবর, আর কোনও জেলা থেকে এত জন কন্যাশ্রী এবার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়নি। গত বছর পূর্ব বর্ধমান থেকে দুই জন কন্যাশ্রী রাজ্যস্তরে পুরস্কৃত হয়েছিল। জেলা কন্যাশ্রী প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মৌলি সান্যাল বলেন, “এটা আমাদের কাছে খুবই গর্বের ব্যাপার। ১১ জন কন্যাশ্রী রাজ্যস্তরে পুরস্কৃত হচ্ছে।” জানা গিয়েছে, বুধবার জেলাস্তরে পালিত হবে কন্যাশ্রী দিবস। সেখানে ৫ জন কন্যাশ্রীকে সম্মানিত করবে জেলা প্রশাসন।
রাজ্যস্তরে পুরস্কারের জন্য পূর্ব বর্ধমান থেকে মনোনীত কন্যাশ্রীদের সকলেই ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য পেয়েছে। কেউ ফুটবল, কেউ ক্যারাটে, কেউ বা দাবায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কার জিতেছে। তবে এই ১১ জনের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভাতার ব্লকের এড়ুয়ার গ্রামেরই ৫ কন্যাশ্রী রয়েছে। সকলেই ফুটবলার। এছাড়া বর্ধমান শহরের তিন কন্যাশ্রী রয়েছে। বাকিরা মেমারি, পূর্বস্থলী ও কাটোয়ার বাসিন্দা।
বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়
মেমারি রসিকলাল স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। মেমারি শহরেই বাড়ি। বাবা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। ২০২০ সালে ওয়ার্ল্ড, এশিয়া ও কমনওয়েলথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হয়েছে। ২০১৯ সালে কমনওয়েলথ দাবা চ্যাম্পিয়শিপে সোনা, গত ২১ জুন ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশনের তরফে এশিয়ান ইয়ুথ মেডাল পেয়েছে। ২০১৮ সালে ওম্যান ক্যান্ডিডেট মাস্টার (ডাব্লুসিএম) টাইটেল পেয়েছে রূপো জিতে, ২০১৮ সালে দিল্লিতে অনূর্ধ্ব ১৪ কমনওয়েলথ দাবায় রুপো জেতে। ওই বছরই থাইল্যান্ডে এশিয়ায় যুব দাবায় দলগত বিভাগে সোনা ও ব্যক্তিগত বিভাগে রুপো জিতেছে। এছাড়া জাতীয় ও রাজ্যস্তরের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রচুর পদক জিতেছে বৃষ্টি।
কেয়া চৌধুরি
বর্ধমান বাণীপীঠ গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী। বাবা পূর্ণেন্দু চৌধুরি। বাড়ি বর্ধমান শহরের বড়নীলপুরে। ২০১৮-১৯ জাতীয় স্কুল গেমস যোগায় অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে দ্বিতীয় স্থান পায়। ওয়ার্ল্ড যোগা ফেস্টিভ্যাল ও চ্যাম্পিয়নশিপেও দ্বিতীয় হয়। ২০১৮ সালে রাজ্য স্কুল গেমস ও স্পোর্টসে যোগাসনে আর্টিস্টিক বিভাগে প্রথম। রাজ্যস্তরে আরও অনেক পদক রয়েছে এই কন্যাশ্রীর।
নুপূর সরকার
পারুলিয়া কুলকামিনী হাইস্কুল। বাবা মদন সরকার। বাড়ি শ্যামবাটি গ্রামে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় অল এশিয়া ওপেন ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় হয়েছে। এছাড়া রাজ্য ও জাতীয় স্তরে বহু প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছে এই কন্যা।
সর্বশ্রী মণ্ডল
বর্ধমান বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী। বাড়ি শহরের শাঁখারিপুকুর পীরতলায়। বাবা তপনকুমার মণ্ডল। ২০১৮ সালে রাজ্যস্তরে যোগাসন চ্যাম্পিয়ন হয়। ওপেন ন্যাশনাল যোগা অ্যান্ড স্পোর্টসে চ্যাম্পিয়ন।
শ্রুতি বীর
বর্ধমান হরিসভা হিন্দু গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বাড়ি বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের শান্তি কলোনিতে। বাবা শ্রীকান্ত বীর। জাতীয় ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় রুপো জিতেছে। আবার আন্তর্জাতিক ক্যারাটে চ্যাম্পিয়শিপে সোনা জিতেছে এই কন্যাশ্রী।
নেহেবিস আনসারি
ভাতার ব্লকের এরুয়ার এইচডিএস বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ফুটবলার। গ্রাম থেকে অনেক প্রতিবন্দকতার সঙ্গে লড়াই করে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। সফলও। ২০১৮ সালে সুব্রত কাপ ফুটবল ফাইনাল খেলেছে। সেকেন্ড রানার আপ।
নসিমন খাতুন
ভাতার ব্লকের এরুয়ার এইচডিবিএস বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী এই কন্যাশ্রী। ফুটবলার। ২০১৮ সালে সুব্রত কাপ ফুটবলে সেকেন্ড রানার আপ দলের সদস্য। ছোট থেকেই কঠিন লড়াই করে এগিয়ে চলেছে এই কন্যাশ্রী।
জেসমিনারা পরভীন
ভাতার ব্লকের এরুয়ার বিএমডিপি ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী। ছোট থেকেই আগ্রহ ফুটবলে। সুব্রত কাপ ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে সেকেন্ড রানার আপ হয়েছে।
রুবিনা খাতুন
ভাতার ব্লকের এরুয়ার বিএমডিপি ইনস্টিটিউশন। ফুটবলার। গ্রামেই ফুটবল চর্চা করে উঠেছে। সুব্রত কাপ ফুটবলে সেকেন্ড রানার আপ দলের অন্যতম সদস্য।
নন্দিতা মাজি
ভাতারের এরুয়ার বিএমডিপি ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী এই কন্যাশ্রী। ছোট থেকেই গ্রামে ফুটবল চর্চা করত। প্রতিভাবান ফুটবলার। সুব্রত কাপ ফুটবলে সেকেন্ড রানার আপ দলের অন্যতম সদস্য।
জেহেরুন খাতুন
কাটোয়া কাশীশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী জেহেরুন। ন্যাশনাল স্ট্রেন্থ লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯-এ তৃতীয় স্থান পায় ৪৮ কেজি বিভাগে। আবার ৪৮ কেজি বিভাগের জেবিপি-তে দ্বিতীয় স্থান পায়। ওয়েটলিফটিং-এ অসামান্য সাফল্যে সম্মানিত হচ্ছে এই কন্যাশ্রী।
আজ কন্যাশ্রী দিবস, বাংলার এক গর্বের দিন। কন্যাশ্রী প্রকল্পটি চালু হয় ২০১৩ সালে, এবং এরপর জিতে নেয় রাষ্ট্রপুঞ্জের ফার্স্ট প্রাইজ পুরস্কার। মেয়েরা আমাদের রাজ্যের, দেশের এবং সারা বিশ্বের সম্পদ ১/২
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 14, 2019
কন্যাশ্রী স্কলারশিপের মাধ্যমে মেয়েরা স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছে। তারা স্বাবলম্বী নাগরিক তৈরী হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৭০০০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে ৬০ লক্ষেরও বেশি মেয়ের ক্ষমতায়ন করেছে এই প্রকল্প ২/২
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 14, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.