সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কৃষিনির্ভর বাংলা। উর্বর এ ভূমি। চাষাবাদে চিরকালই সুনাম বাংলার। কিন্তু সে উর্বরাশক্তির এমন গুণ যে এক গাছে আম-আমড়া-কাঁঠাল ফলছে! মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ কথা শুনে তাই সাময়িক খটকা লাগতে পারে। তবে পরত উন্মোচনেই বেরিয়ে আসবে তুখোড় রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। শ্লেষ-কটাক্ষের কড়া ককটেল। সম্প্রতি এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এসে এ কথাই জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বললেন কেন?
মনোনয়ন পর্বে রাজ্য জুড়ে অশান্তির খবর। বহু রাজ্যবাসীই তা নিয়ে আতঙ্কিত। প্রবীণরা বলছেন, ভোটে অশান্তি নতুন নয়। কিন্তু মনোনয়নেই এই অবস্থা কেন? এদিনের সাক্ষাৎকারে তারই জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিসংখ্যান দিয়ে জানালেন, রাজ্যে ৫৮,০০০ বুথ। তার মধ্যে ৭টি বুথে গন্ডগোল হয়েছে। খুন হয়েছেন চারজন তৃণমূল কর্মী। এর মধ্যে বিজেপি ৪০ হাজার মনোনয়ন জমা দিয়েছে। সিপিএম ২৮ হাজার ও কংগ্রেস প্রায় ১১ হাজারের মতো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, তাহলে নমিনেশন না জমা দিতে পারার অভিযোগ কেন? নিজের বিরোধী জীবনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি জানান, এই সংখ্যায় মনোনয়ন তিনিও জমা দিতে পারেননি। তাঁর বক্তব্য, কোনও মৃত্যুই তিনি চান না। তবে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম পরিকল্পিত খেলা খেলছে। তাদের জন্যই বিশেষ কিছু ঘটনা বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। আর এই প্রসঙ্গেই বিরোধীদের একহাত নিয়েছেন তিনি। তাঁর কটাক্ষ, “এক গাছে কখনও আম-কাঁঠাল-আমড়া হয় বলে শুনিনি। এখন তো শুনছি হয়। কংগ্রেস-বাম-বিজেপি সব একজোট হয়েছে বাংলার বদনামের জন্য।”
তাঁর জমানায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভোটের জল গড়াল আদালতে। শাসক হিসেবে এটা কি তাঁর সেটব্যাক? মমতা জানালেন, দুই ক্ষেত্রে কোনওবারই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হননি। কমিশন বা বিরোধী আদালতে গিয়েছে। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়েছে। তবে তাঁর অভিযোগ, বিরোধীরা রাজ্যে ভোট করাতেই চায় না। তাই কোর্টে যাচ্ছে। নইলে মনোনয়ন শেষ হওয়ার পর কেন আদালতে গেল বিরোধীরা? তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে তুমুল গরম পড়ছে। কর্নাটকে পর্যন্ত মে মাসের মাঝামাঝি ভোট শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ এখানে নেতারা ভোট বিলম্বিত করে চলেছেন। তাঁর দাবি, বিরোধী নেতারা তো তৃণমূল স্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। ঠান্ডাঘরে বসে থাকেন আর টিভিতে মুখ দেখান। সুতরাং বাস্তব সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল নন। তাই ভোট পিছোতে কোর্টে দৌড়চ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, কোর্টে যেতে তো টাকা লাগে। সেই টাকা দিয়ে বিরোধীরা কোনওদিন কারও মুখে খাবার কিনে দিয়েছে?
কিছুদিন আগেই ধর্মীয় কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রানিগঞ্জ-আসানসোল। সে প্রসঙ্গ তুলেই তিনি বলেন, তাঁরা রাজ্যে ৬ শতাংশ আদিবাসী ভাই-বোন আছেন। তফসিলি আছেন ২৩ শতাংশ। সংখ্যালঘু আছেন ৩০ শতাংশ। তিনি বলেন, আমি কি রাজ্যের ৬০ শতাংশ লোককে ছেড়ে দিতে পারি? তিনি জানান, যে দায়িত্বে তিনি আছেন সেখানে বসে সকলকে সমান চোখে দেখতে হয়। মুসলিম তোষণের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন তাঁদের দেখভাল করা তাঁর দায়িত্ব। ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট থাকলে শুধু আগুন জ্বলবে, সেটা তো কোনও সলিউশন হতে পারে না। বরং তা খুঁচিয়ে দেওয়া পলিটিক্যাল পলিউশন বলেই দাবি তাঁর। রাম নবমী নিয়ে বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করেছে ও ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে গন্ডগোল করেছে বলেই সাফ কথা তাঁর।
সামনেই লোকসভা নির্ভাচন। সেখানে বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ তিনি। তৈরি করছেন ফেডারেল ফ্রন্ট। তবে তিনি বলছেন, তাঁর কাজ কাঠবেড়ালির। অর্থাৎ সেতু তৈরিতে তিনি সাহায্য করছেন মাত্র। এক্ষেত্রে তাঁর মত, নোট বাতিল থেকে এফডিআরআই বিল আনার মতো বিজেপি এমন কয়েকটি করেছে, যার ফল ভুগতে হবে দলটিকে। জয় সহজ হবে না। সেখানে আঞ্চলিক দলগুলির ভাল ফলের সম্ভাবনা আছে। তবে ওই একের বিরুদ্ধে এক তত্ত্ব মানতে হবে। যে যেখানে শক্তিশালী সেখানে তাকে জায়গা দিতে হবে। কংগ্রেসের উদ্দেশ্য তাঁর প্রচ্ছন্ন বার্তা, বৃহত্তর লড়াইয়ের স্বার্থে জায়গা ছাড়তেও জানতে হয়।
১৯৯৮ সালে নতুন দল করেছেন। এখন দেশে বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ তিনি। কেমন লাগে এই সাফল্য? মমতা জানাচ্ছেন, তিনি তাঁর আন্দোলনের দিনগুলো ভুলে যাননি। বললেন, আজ কেউ কেউ চার ঘণ্টার অনশন করে। পুরোটাই ‘মকারি অফ ডেমোক্রেসি’। গণতন্ত্রের নামে প্রহসন। নিজের অনশনের দিনগুলো স্মৃতিতে ফিরে গিয়ে তিনি জানান মানুষের সঙ্গে যোগাযোগই তাঁর মূলমন্ত্র। যখন যেখানে হিংসার ঘটনা ঘটেছে তিনি দৌড়ে গিয়েছেন। ছাত্র আন্দোলনই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি। তিনি জানান, এই আন্দোলন যারা করে তারা অসৎ হতে পারে না। সেখান থেকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের আন্দোলন। স্মৃতির সরণী ধরে হেঁটে তিনি বলেন, সেদিন মহাশ্বেতা দেবী আর কবীর সুমনই পাশে ছিলেন। এখন অনেকেই পরিবর্তনের শরিক হতে আসে। তবে তাঁর চ্যালেঞ্জ নিজের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন নিজেকে ভেঙে, কষ্ট দিয়ে তিনি নিজের মধ্যেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। তাঁর মন্তব্য, মাথা উঁচু করে চলতে গেলে নিজেকে নিজের আয়নাতেই মুখ দেখতে হয়।
বাম আমলে বহু আন্দোলন করেছেন। মারও নেমে এসেছে। শরীরে একাধিক আঘাত। তাই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। মমতা জানাচ্ছেন, গত বিশ ধরে তিনি ভাত-রুটি খান না। তবে মুড়ি খেতে ভালবাসেন। মিষ্টি ছাড়া নাকি ঘুমই হয় না। সকালে কিছু খেয়ে বেরিয়ে পড়েন। অফিসে স্রেফ চা-বিস্কুটই। পরে বাড়ি ফিরে স্নান সেরে আয়েশ করে মুড়ি খান। কোনওদিন আবার ডিমের বড়ার ঝাল দিয়ে মুড়ি খেতে ভালবাসেন। চকোলেটও তাঁর ভীষণ প্রিয়। ওজন বেড়ে গেলেই তা কমিয়ে ফেলেন। একদিকে আর্ন অন্যদিকে বার্ন। আর আছে নিয়মিত হাঁটা। এই তাঁর ফিটনেস ফান্ডা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.