সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: দৌড়ঝাঁপ, কাজকর্ম, দলীয় কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া – দিনের মধ্যে অধিকাংশ সময়টা তাঁর এভাবেই কাটে, সেই কবে থেকে। বছর ৬৫ পেরলেও সে অর্থে রিটায়ারমেন্টের কোনও প্রশ্ন তো আসেইনি। উলটে যেন সক্রিয়তা আরও বেড়েছে। এই রূপেই তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত এ রাজ্যের সব বয়সের মানুষ। কিন্তু ১০ মার্চের পর থেকে তাঁর এই খুব চেনা রূপটা বদলেছে। হুইলচেয়ার এখন তাঁর নিত্যসঙ্গী। হাঁটছেন না, হুইলচেয়ার বসেই চষে বেড়াচ্ছেন রাজ্যের প্রতিটি প্রান্ত। কিন্তু এবার তিনি ক্লান্ত, অবসন্ন। তাই তো দিনভর এত এত জনসভার পর বিকেলের পড়ন্ত রোদের দিকে তাকিয়ে বলে ফেলছেন – “শরীর ভাল নেই। কাজের চাপ আরও বাড়ছে।” এমনই বিষাদমিশ্রিত কিছু শব্দ উচ্চারিত হল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ‘জননেত্রী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কণ্ঠে।
মঙ্গলবার বিকেলে পুরুলিয়ায় তিনটি জনসভা শেষ করে বিকেলে দুর্গাপুরে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে হুইলচেয়ারে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। স্বভাবতই তাঁকে ঘিরে ছিল কর্মী, সমর্থকদের একটা ছোট ভিড়। প্রত্যাশিতভাবেই সেখানে উঠল ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ স্লোগান। তার মাঝেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হোটেলে ফেরেন। হোটেলে ঢোকার আগে সাংবাদিকরা তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন, “শরীর ভাল নেই। কাজের চাপ আরও বাড়ছে।” তবে আর কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। তার আগেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে নিরাপদে হোটেলে ঢুকিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিরাপত্তা রক্ষীরা।
এদিনও সকালে মুখ্যমন্ত্রী হুইলচেয়ারে বসেই দুর্গাপুরের (Durgapur) সিটি সেন্টারের ওই হোটেল থেকে ৩০০ মিটার দুরের গান্ধী মোড় সার্কাস ময়দান হেলিপ্যাডে যান। জনসভা শেষ করে বিকেলে একইভাবে হুইলচেয়ারে বসেই ফেরেন হোটেলে। এদিনও রাস্তার ধারে বহু তৃণমূল কর্মী ও সাধারণ মানুষ তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন উপস্থিত তৃণমূলের কর্মী-সহ সাধারণ মানুষজন।
গত ১০ তারিখ নন্দীগ্রামে (Nandigram) মনোনয়ন পেশ করার পর মন্দির দর্শনে গিয়ে পায়ে চোট পান প্রার্থী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসএসকেএমে প্রায় দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সেভাবে বিশ্রাম না নিয়েই ফের ভোটপ্রচারে বেড়িয়েছেন তিনি। বলেইছিলেন, হুইলচেয়ারে বসেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াবেন। করছেনও তাই। কিন্তু মনের অদম্য জেদ, ইচ্ছাশক্তিও তো মাঝেমধ্যে ক্লান্তির কাছে হার মানে। এবার তাঁরও হচ্ছে। শরীরে থাবা বসাচ্ছে ক্লান্তি। তাই আপনজনদের ভিড়ের মাঝে তাঁর মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে অবসন্নতার কথা। বলে ফেলছেন – “শরীর ভাল নেই। কাজের চাপ আরও বাড়ছে।” সমর্থকরা অবশ্য বলছেন, ওঁর কাছে এসব জনসভা করা কোনও ব্যাপারই নয়। ক্লান্তি ঝেড়ে ফের উঠে দাঁড়াবেন তিনি, স্বমহিমায় ফিরবেন নবান্নের চেয়ারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.