Advertisement
Advertisement
Mamata Banerjee

রাজ্যে পরিবর্তনের ১০ বছর, মুখ্যমন্ত্রী মমতার আমলে কী পেল বাংলা?

বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ১০ বছর পূর্ণ হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

Mamata Banerjee regime completes 10 years, here is what Bengal harvested | Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 13, 2021 4:52 pm
  • Updated:May 13, 2021 4:52 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেখতে দেখতে দশ। ২০১১ সালের ১৩ মে সূচনা হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়ের। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিলেন পরিবর্তনের সামনে। ৩৪ বছরের বাম দুর্গে ফাটল ধরিয়ে সেই পরিবর্তনের কাণ্ডারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সেদিন জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘এই জয় আমার নয়, এই জয় মা-মাটি-মানুষের জয়।’’ দেখতে দেখতে এক দশক পেরিয়ে এসে তৃতীয় বারের জন‌্য রাজ্যের মসনদে (WB Elections 2021) সেই তিনিই। আজও অপরাজেয়, অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাংলার অগ্নিকন্যা। আজও সেই মা-মাটি-মানুষই রয়েছে তাঁর পাশে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে রয়েছে ব্যালট বাক্সেই। তৃণমূ‌‌ল কংগ্রেসের (TMC) প্রাপ্ত ভোটের হিসেব বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই দশ বছরে মানুষের আস্থা কমা তো দূরের কথা, বরং তা বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁয়েছে।

যদিও কয়েক সপ্তাহ আগেই যেন পরিস্থিতিটা অন্যরকম ছি‌ল। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ওঠা গেরুয়া ঝড় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল দেশের শাসক দলকে। রাজ্যে ভোটপ্রচারে বারবার বিজেপির (BJP) হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের আনাগোনা। কিন্তু ২ মে গণনা শুরু হতেই দেখা গেল ছবিটা একই রয়ে গিয়েছে। ফ্যাক্টর সেই মমতাই। বরং ২০১৬ সালের থেকেও বেশি আসনে জয়লাভ করে বাংলায় ফের তৃণমূলেরই প্রত্যাবর্তন। বারবার। তিনবার। কিন্তু কীভাবে? কোন জাদুতে বাম শাসনের অবসান ঘটানো সেদিনের মমতা দশ বছর পেরিয়ে এসেও রয়ে গিয়েছেন জনপ্রিয়তার উত্তুঙ্গ শীর্ষে?

Advertisement

Mamata

[আরও পড়ুন: অধিকাংশ ট্রেন না চলায় খাঁ খাঁ স্টেশন চত্বর, খাবারের অভাবে অসুস্থ বহু ভবঘুরে]

গত বছরের ডিসেম্বরে যখন ভোটের প্রচার সবে শুরুর মুখে, সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস প্রকাশ করেছিল এক রিপোর্ট কার্ড। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁদের সরকার সমস্ত রকম ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করেছে। আর সেই কাজের খতিয়ান নিয়েই মানুষের কাছে পৌঁছতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু ঘটনা হল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দশ বছরে তৃণমূ‌লের কাজের পরিসংখ্যান দেখে তার হিসেব কষা বিশেষজ্ঞদের কাজ। সাধারণ মানুষের কাছে যেটা থাকে তা হল নিজের অঞ্চল দেখে বিচার। আর সেই বিচারে, অর্থাৎ পরিসংখ্যানে থাকা শুকনো তথ্যকে সরিয়ে রেখেও এই রাজ্যের উন্নয়নকে বোঝা খুব শক্ত নয়। এরাজ্যের বাসিন্দারা গত দশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, কোন কোন প্রকল্পে কেমন ভাবে উন্নয়নের বীজ বুনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তা থেকে পানীয় জল। বিদ্যুৎ পরিষেবা থেকে সকলের জন্য খাদ্য। মা ক্যান্টিন। কৃষিজমির খাজনা মকুব করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ। কন্যাশ্রীর বিশ্বসেরার স্বীকৃতি লাভ। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বিনামূল্যে চিকিৎসা। চোখকান একটু খোলা রাখলেই কিন্তু আঁচ পাওয়া যায় গত দশ বছরে কতটা বদলেছে পশ্চিমবঙ্গ। মানবোন্নয়নের সামগ্রিক গ্রাফটা কতটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

আর একটা বিষয়। কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী থেকে স্বাস্থ্যসাথী। এই ধরনের সব প্রকল্পেই অগ্রাধিকার পেয়েছেন মহিলারা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হচ্ছেই মেয়েদের নামে। তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকছেন পরিবারের বাকিরা। বার্তাটা স্পষ্ট। বহুবার মুখ্যমন্ত্রী তা নিজের মুখেও বলেছেন। সংসারের আসল হাল তো ধরে থাকেন মহিলারাই। তাঁরা পারেন রোজগারের অর্থকে সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে সংসারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে। আর তাই তাঁদের কথা বারবার ভেবেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই ধরনের পদক্ষেপগুলি আপামর বাংলার মানুষের মনেও এনেছে বিশ্বাস। যাঁকে তাঁরা সিংহাসনে বসাচ্ছেন, সেই মানুষটা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, তাঁদের মেয়ে হিসাবে বিপদে আপদে দাঁড়াবে।

আসলে ২০১১ পূর্ববর্তী সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে যখন সিপিএম তথা বামফ্রন্ট সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বাংলা। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই ছুঁয়ে গোটা রাজ্যেই জ্বলছে অশান্তির আগুন। তখন তার সামনে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরলস সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েও অনেকে বলেছিলেন, বিরোধী নেত্রীর ভূমিকা অপেক্ষাকৃত সহজ। সরকারের দোষত্রুটি বের করে আক্রমণ করাই যায়। কিন্তু নিজে রাজ্যের শীর্ষপদে থেকে কাজ করা, এত মানুষের প্রত্যাশা পূরণ সহজ নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি তা পারবেন? এই এক দশকে তাঁরা উত্তর পেয়ে গিয়েছেন। একদিন রাইটার্স বিল্ডিং থেকে তাঁকে হিড়হিড় করে টেনে বের করে দেওয়ার সময় মমতা বলেছিলেন, একদিন তিনি এখানেই ফিরে আসবেন। তিনি কথা রেখেছিলেন। কিন্তু কেবল সেইটুকুই যে তাঁর অভিপ্রায় ছিল না, তা আজ পরিষ্কার। বরং তা ছিল‌ এক শুরুয়াৎ। ‘মা-মাটি-মানুষের জয়’ বলে যে সাফল্যকে তিনি অভিহিত করেছিলেন, তা যে কথার কথা নয় তা আজ স্পষ্ট। টানা তিনবারের জন্য জনাদেশ পেয়ে রাজ্যের মসনদে বসা তাই অনিবার্যই ছিল। দশ বছর পেরিয়ে এসে তা আজ দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।

[আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা: পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এবার রাজ্যে জাতীয় তফসিলি কমিশনের প্রতিনিধিরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement