দীপঙ্কর মণ্ডল: বেকারত্ব নির্মূলে নয়া পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। এক ছাতার তলায় দেশজ এবং বহুজাতিক সংস্থাকে ডাকা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সেই ঠিকানা থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। কারিগরি প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই উদ্যোগ। দু’বছর আগে স্কুলছুটদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দিতে ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-সহ জেলাগুলিতে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। চলতি বছরে পুজোর পর মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রকল্প পূর্ণতা পেতে চলেছে। নেতাজি ইন্ডোরে ২৬ এবং ২৭ নভেম্বর দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা হাজির হবে। ওখানেই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে বাংলার ছাত্রছাত্রীদের। বৃহস্পতিবার নবান্নে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব রোশনি সেন ও অন্য অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই উৎকর্ষ বাংলার ব্যানারে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত মেগা ইভেন্ট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজ্যের বেশকিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসিং হয়। স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পায় বহু পড়ুয়া। কিছু কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই পদ্ধতি আছে। তবে বেসরকারি পলিটেকনিকগুলির একটি অংশ থেকে ফি বছর অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন ভুয়া সংস্থার কীর্তি খবরের শিরোনামে আসে। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ আছে। নয়া পদক্ষেপে সেই সমস্যাগুলো নির্মূল করতে চায় সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী নিজে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। অমিতবাবু শিল্প দপ্তরেরও দায়িত্বে। দেশজ এবং বহুজাতিক বহু সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। বণিকসভাগুলির সঙ্গেও অর্থমন্ত্রীর পুরনো সম্পর্ক। নবান্নর আধিকারিকদের বক্তব্য, এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হতে চলেছে নভেম্বরে। এক ছাদের নিচে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি পাচ্ছে, এমন নজির এখনও কোনও রাজ্যে নেই।
[ এলপিজি কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার বিজেপি নেতা রঞ্জিত মজুমদার ]
সরকারের শীর্ষকর্তারা মনে করছেন, গোটা দেশে বাংলার উদ্যোগ ফের একটি নজির তৈরি করতে চলেছে। কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব রোশনি সেন জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব বড় ইভেন্ট। নেতাজি ইন্ডোর থেকে ছাত্রছাত্রীরা প্লেসমেন্ট পাবে। তবে নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা এখনও ঠিক করা হয়নি।” প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে উৎকর্ষ বাংলা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অষ্টম উত্তীর্ণ স্কুলছুটদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে সরকার। পরে এই প্রকল্পের অধীনে ৩০০ ঘণ্টা থেকে তিন বছরের কারিগরি প্রশিক্ষণ নেওয়া সবাইকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২৬২টি আইটিআই, ১৫২টি পলিটেকনিক এবং ২৭৮২টি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও এই প্রকল্পের অধীনে আসে। শুধু প্রশিক্ষিত স্কুলছুট নয়, আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে এই বিরাট সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েদেরও নিশ্চিত চাকরি দিতে চায় বাংলার সরকার।
রাজ্য সরকারের অন্যতম সফল একটি প্রকল্প কন্যাশ্রী। মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করায় বাংলার সুনাম ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশে। সেই প্রকল্পে মুখ্যমন্ত্রীকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলেন আইএএস অফিসার রোশনি। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী এই আমলা ফের স্বকীয়তার ছাপ রাখতে চলেছেন। এক ছাদের নিচে এত বেশি সংখ্যার চাকরি আগে কোথাও দেওয়া হয়নি।
[ অগ্নিমূল্য সবজি-ফলের বাজারে, বিশ্বকর্মা পুজোয় বিপাকে আম জনতা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.