Advertisement
Advertisement

Breaking News

অপর্ণা সেন

‘নিজেই নিজের কবর খুঁড়ছেন মমতা’, বেনজির তোপ অপর্ণার

মমতার ব্যবহার আগামী বিধানসভায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা অপর্ণার।

Mamata Banerjee digging her own grave', says Aparna Sen
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:June 5, 2019 11:08 am
  • Updated:June 5, 2019 11:12 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে ক্রমশ জোরাল হচ্ছে বিতর্ক। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরও মোদি-মমতার তরজা যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না। গোটা দেশে ‘হিন্দি’ বাধ্যতামূলক করা ও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ইস্যুতে আরও ঘোরাল হচ্ছে পরিস্থিতি। ক্রমাগত দেশে হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাকে প্রায় একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠে পরিণত করে ফেলার চেষ্টা চলছে বলেই মনে করছেন বিদ্বজনদের একাংশ। এর তীব্র বিরোধীতা করে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। পাশাপাশি এই বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। রাখঢাক না করে অপর্ণা সাফ বলেন ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন’।

[আরও পড়ুন:  ঝুমুরের সুরে বাল্যবিবাহ বন্ধের ডাক, উদয়াস্ত প্রচারে পুরুলিয়ার লোকশিল্পী]

Advertisement

‘দয়া করে কিছু বলার আগে একটু ভাবুন’, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই পরামর্শও দেন বাংলা ছবির ‘মেমসাহেব’। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেঁফাস মন্তব্য করা কখনই তাঁকে শোভা পায় না। এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে
নিজেকে দীর্ঘদিন আসীন রাখতে হলে, নিজের রাগ এবং উত্তেজনাকে যে আরও প্রশমিত করা দরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেকথাও বলেন তিনি। জয় শ্রীরাম, জয় মা কালী কিংবা আল্লা হু আকবর-এর মতো ধর্মীয় স্লোগান, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে বাক স্বাধীনতা অপার, কখনই আটকানো সম্ভব নয়। তা সে যে কোনও উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই হোক না কেন, জানান অভিনেত্রী। কিন্তু, এপ্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন একজন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহার এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে। তিনি জানান, যিনি মানুষের বিপুল সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, পাশাপাশি মাওবাদী এবং গোর্খা ইস্যুকেও কঠোর হস্তে দমন করার মতো বেশ কিছু ভাল কাজও করেছেন, সেই মানুষটিই এসবের জবাবে ওরকম প্রতিক্রিয়া দেবেন কেন? এত আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করবেন কেন! এভাবে যে তিনি তাঁর সমর্থকদেরই হতাশ করছেন সেকথা তো বুঝতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, এমনটাই মত পরিচালিকা অপর্ণা সেনের।

রাজ্যে এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় ‘জয় শ্রীরাম’ বিতর্ক। সেই প্রসঙ্গেই একটি জাতীয় স্তরের বেসরকারি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই মন্তব্য করেন অপর্ণা। বললেন, “জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে যা হচ্ছে, যেভাবে হিন্দুত্বকে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সুচারুভাবে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যেভাবে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে, আমি তা মোটেই সমর্থন করি না। বরং মনে করি, রাজনীতি আর ধর্মের জায়গাটা পুরোটাই আলাদা। এই দুটোকে সব সময় আলাদা রাখা উচিত। কারণ, যে মুহূর্তে রাজনীতি এবং ধর্ম মিশে যাবে সেই মুহূর্তে দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে ভেদাভেদও। কিন্তু, আমাদের দেশে যেখানে ‘বাক স্বাধীনতা’র বিপুল গুরুত্ব, সেখানে ধর্মীয় স্লোগানকে থামাবেন কী করে! এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মেজাজ হারানো কি মুখ্যমন্ত্রীকে শোভা পায়! যেভাবে তিনি ওই স্লোগান শুনে নিজের গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন এবং যে
ভাষায় স্লোগানদাতাদের আক্রমণ করছেন, তা মোটেই শোভা পায় না একজন মুখ্যমন্ত্রীকে!”

[আরও পড়ুন:  লাড্ডু বিলিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ, রণক্ষেত্র বর্ধমান শহর]

অপর্ণা সেন রাজ্যের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। বহুবার বহু অনুষ্ঠানে, এই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হয়ে তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমনকী মোমবাতি হাতেও নেমেছেন পথে। হেঁটেছেন মিছিলেও। তবু তিনি মনে করেন সুশীল সমাজের কোনও রাজনৈতিক দলের অন্ধ এবং কট্টর সমর্থক হওয়া উচিত নয়। বরং তাঁদের ভূমিকা হবে অনেকটা বিরোধীদের মতো। যেকোনও ভুল ধরিয়ে দেবে চোখে আঙুল দিয়ে। দায়িত্ব পালন করবে সঠিক পথ বাতলে দেওয়ার। আর সেখানে দাঁড়িয়েই অপর্ণা সেনের পরামর্শ, মুখ্যমন্ত্রী যদি তাঁর কথা বলার আগে ভাবনা চিন্তা না করেন তবে আগামী দিনে খুব কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা আগামী বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও জোর প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি বিজেপির হিন্দুত্ববাদকে বিঁধে অপর্ণার মন্তব্য, “যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত, শহুরে, এলিট মধ্যবিত্তরা বিজেপিমুখী হয়ে উঠছেন, তাতে ভয় হচ্ছে। আশা করব দেশে এই মুহূর্তে যে ভাবনা দেশবাসীকে চালিত করছে, দেশে যা
চলছে, তা ঠিক করার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।”

অন্যদিকে, অপর্ণা সেনের আশঙ্কা গেরুয়াদের ‘সাভারকার ব্র‌্যান্ড’ নিয়ে। সাভারকারের মতাদর্শে যেভাবে হিন্দুত্বকে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে তার ঘোর বিরোধী তিনি। “সাভারকার ব্র‌্যান্ড নয় বরং আমি গান্ধীর বহুত্ববাদের পন্থী। কিন্তু, সমস্যা হল দেশে এখন গান্ধী, নেহরুর মতাদর্শ বিপন্ন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনকী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মহান ব্যক্তিত্বকেও আক্রমণ করা হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আমার অনুরোধ, দয়া করে মনে রাখুন আপনি
কিন্তু শুধু হিন্দুদের প্রধানমন্ত্রী নন। আপনি মুসলমান, খ্রিস্টান এবং দলিতদেরও প্রধানমন্ত্রী।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement