কিংশুক প্রামাণিক, চ্যাংড়াবান্ধা: সামনে বাংলাদেশ বর্ডার। এক পাশে রেলপথ। বহুবার তাঁর মুখে শুনেছি এই মালবাজার-চ্যাংড়াবান্ধা রেলপথের কথা। মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজ, কীভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন দফায় দফায় লড়াই করে। আগেও দেখেছি এই চ্যাংড়াবান্ধায় এলে কেমন নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৯২-৯৩’এ তাঁর জনসংযোগ যাত্রায় একটি মাইলস্টোন যদি হয় বেলপাহাড়িতে জৌগ্রাম, যেখানে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন মানুষের পিঁপড়ের ডিম খাওয়ার ইতিবৃত্ত, তবে অন্যটি এই মেখলিগঞ্জ ব্লকের সীমান্ত ঘেঁষা চ্যাংড়াবান্ধা। এখানে সেদিন এই রেলপথের পুনর্জাগরণ দাবি থেকে ছিটমহলের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেছিলেন মমতা। আশ্চর্য, সেই রেলপথ যেমন বেঁচে গিয়েছে তেমন তাঁর হাত ধরেই মুক্তি পেয়েছে কোচবিহারের ছিটমহলের মানুষ। ঐতিহাসিক ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তির মধ্য দিয়ে মিটেছে সত্তর বছরের অভিশাপ।
[সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলায় দাদাকে কুপিয়ে খুন করল তিন ভাই]
এবারের মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর অন্যরকম। মূলত চার জেলার কাজের মূল্যায়নে জোর। চারদিন বেসক্যাম্প উত্তরকন্যার সরকারি অতিথি শালায়। এদিন চ্যাংড়াবান্ধায় ছিল কোচবিহার জেলার প্রশাসনিক বৈঠক, সঙ্গে উপভোক্তাদের পরিষেবা প্রদান। এমন প্রত্যন্ত এলাকায় এই ধরনের মেগা কর্মসূচি মমতার প্রশাসনের পক্ষেই সম্ভব। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, উপদেষ্টা-সহ নবান্নের সচিব পর্যায়ের ফুলবেঞ্চ হাজির। অভিনব বৈঠকে উঠে এল জেলার সার্বিক রূপ। আর কী কী দরকার। তিস্তার উপর ‘জয়ী সেতু’র কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে রাস্তার কাজে ভঙ্গুর সাদা পাথরের ব্যবহার নিয়ে তোপ- কিছুই বাদ গেল না।
বক্তব্যে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল রাজনৈতিক অংশ। রামের পর হনুমান, এখন আবার কৃষ্ণ। ধর্ম নিয়ে সংঘ পরিবারের এরাজ্যে ভোট ভাগের রাজনীতি এবার নতুন মোড়কে। এবার তারা পালন করবে জন্মাষ্টমী। প্রশাসনিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তোলেন পুলিশের উপদেষ্টা সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, “জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা সামনে। অনেকের অনেক প্ল্যান আছে। তারা সেটা করতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।” রামনবমী, হনুমানজয়ন্তীর মতোই জন্মাষ্টমীকে নিয়ে প্রশাসন যে সতর্ক তা জানিয়ে দেন ডিজি। এদিকে অসমে পরিচয়পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা বেরোলে অশান্তি বাধতে পারে। প্রশাসনকে সতর্ক করে মমতা বলেন, “প্রশাসন সতর্ক থাকুক। কাউকে দাঙ্গা করতে দেওয়া যাবে না। অসমে গন্ডগোল হচ্ছে। যদি পুশব্যাক শুরু হয়, নজর রাখতে হবে। বাইরে থেকে কারা আসছে লোকাল থানার ওসি আর বিডিও নজর রাখুন।” কারও নাম না করেই মমতা বলেন, “সীমান্ত রাজনীতি করার জায়গা নয়। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর বিষয়।”
[ডাইনি অপবাদে মারধর মহিলাকে, উদ্ধারে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তারা]
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মেদিনীপুরে সভা করতে আসছেন। বলা হচ্ছে কেন্দ্রের সামাজিক প্রকল্পের প্রচার। মমতা এদিন জনসভায় কারও নাম না করেই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য রাজ্যের সমাজিক প্রকল্পগুলি উল্লেখ করেন। বলেন, “গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। এত দেনা যে মাথার চুল বিকিয়ে যাচ্ছে। রয়েছে বঞ্চনা। তা সত্ত্বেও আমরা যা করেছি কেন্দ্র কেন কোনও রাজ্য করতে পারেনি।” আধিকারিকদের উদ্দেশে অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব মানুষ যাতে সামাজিক প্রকল্পগুলির সুবিধা পায় তা চূড়ান্ত করতে হবে। এখন থেকে বিডিও, এসডিও অফিসে সামজিক প্রকল্পের ছাপানো তালিকা রাখতে হবে। সব কিছু মানুষের জন্য।”
হক কথা। সড়কপথে উত্তরকন্যা থেকে চ্যাংড়াবান্ধা যাওয়ার পথে জলপাইগুড়ির ফাটাপুকুরে এক দিনমজুরকে দেখে গাড়ি দাঁড় করান মমতা। অনুকূল কুড়ি নামে লোকটি জানান, “আমার মেয়ে প্রথমবর্ষে ভরতি হতে পারছে না।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন “অপেক্ষা করুন। মিটিং সেরে আসছি।” ফেরার পথে ওই গ্রামে গাড়ি দাঁড় করান। অনুকূলকে খুঁজে বের করে জানান, “মেয়ে ভরতি হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তার পড়াশোনার দায়িত্ব এখন থেকে আমার।”
[মুর্শিদাবাদে কী করে মাদক পাচার করে চিনারা? পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.