স্টাফ রিপোর্টার: পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে৷ আর তার জেরেই মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
মঙ্গলবারই এই ঘটনায় সিআইডির প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে৷ সেই তদন্ত রিপোর্টের কথা তুলে ধরেই মমতা জানিয়ে দেন, মুর্শিদাবাদের ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত৷ তার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়াতে গুজব ছড়ানো হয়েছিল৷ তার জেরেই ঘটনা এমন মারাত্মক রূপ নেয়৷ তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদের ঘটনায় প্ল্যানিং করে, প্যানিক করে মানুষ মারা হয়েছে৷ সিআইডির প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট আমি পেয়েছি৷” এই নিয়ে বিরোধীদের দিকে উস্কানির অভিযোগ তুলে মমতার স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি কখনও বিধবংসী রাজনীতি পছন্দ করি না৷ আগুন নিয়ে খেলবেন না৷ মাথায় রাখতে হবে, কাউকে জ্বালিয়ে দিতে গেলে, নিজেকেও জ্বলতে হবে৷ আজ রাজনীতি আছে৷ কিন্তু মানুষের জীবন তার থেকেও দামী৷ মানুষের জীবন নিয়ে কখনও খেলবেন না৷”
সোমবার স্বাস্থ্যসচিবের নেতৃত্বে যে কমিটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিল, সেই কমিটির রিপোর্ট মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়ে৷ নবান্ন সূত্রের খবর, রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংযোগের কোনও ত্রূটি ছিল না৷ বেশ কিছু ক্ষেত্রে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করা হয়েছে৷ সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েই নেতাজি ইন্ডোরে সরকারি কর্মসূচিতে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিকে মাত্র তিনদিনের মধ্যেই অগ্নিকাণ্ডে নিহত হাসপাতালের আয়া কাবেরী সরকারের স্বামী নির্মল সরকারের হাতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দু’লক্ষ টাকা এককালীন অর্থসাহায্যের চেক তুলে দেওয়া হল৷ এই ঘটনায় নিহত নদিয়ার বাসিন্দা উজ্জ্বলা হাজরার পরিবারের কাছেও চেক পাঠানো হচ্ছে৷
এদিকে সোমবার স্বাস্থ্যসচিবের হাসপাতাল পরিদর্শনের পরই নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মুড়ে ফেলা হল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে৷ বন্ধ থাকা সিসিটিভি চালুর পাশাপাশি বসানো হল নতুন সিসিটিভিও৷ হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হল৷ এদিকে অগ্নিকাণ্ডের তিনদিন পর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে যান বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরি৷ আগুন লাগার ঘটনায় এক কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করায় আদালতে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি৷ ওদিকে ধৃত কংগ্রেস কর্মী অমল গুপ্ত ওরফে পল্টুকে রাতে হাসপাতাল থেকে মুর্শিদাবাদ লকআপে নিয়ে যায় সিআইডি৷
ঘটনার তিনদিন পর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে আসেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি৷ তাঁর অভিযোগ, “নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে কংগ্রেস কর্মীকে অন্তর্ঘাতকারী সাজাতে চাইছে রাজ্য সরকার৷” অধীরের দাবি, ঘটনার দিন অক্সিজেন সরবরাহকারী পাইপলাইন যদি হাসপাতালের কর্মীরা বন্ধ না করে দিতেন, তাহলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটত৷ ওই পাইপলাইন বন্ধ করতে ধৃত পল্টু বড় ভূমিকা নেয়৷ পল্টুকে গ্রেফতারের ঘটনায় প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার হুমকি দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি৷ ওদিকে কংগ্রেস কর্মী পল্টুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান পুরুষ ও মহিলা আয়ারা৷ তাঁদের দাবি, অবিলম্বে পল্টুকে মুক্তি না দিলে তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেবেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.