সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘‘সিপিএমের হার্মাদরা আমাকে খুনের চক্রান্ত করেছিল৷ কিন্তু, আমি মাথা নত করিনি৷ দাঁতে দাঁত চেপে হার্মাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি৷ ভুলে যায়নি সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম৷’’ বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুলের জনসভা থেকে সিপিএম জমানার ‘কলঙ্কিত’ ইতিহাস তুলে ধরে বাম ও বিজেপিকে এক যোগে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘বামেদের ৩৪ বছরের বাম আমলের বহু অত্যাচার সহ্য করেছি৷ কিন্তু, এখন আর নয়৷ বাংলার মানুষকে বিরক্ত করলে সমস্ত হার্মাদদের রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেব৷ এটাই আমার চ্যালেঞ্জ৷’’
নন্দীগ্রাম লাগোয়া বাজকুল কলেজ মাঠে পরিষেবাপ্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঞ্চে উঠেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতিকে উসকে তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মনে করিয়ে দেন, কীভাবে হার্মাদদের সঙ্গে লড়াই করে কীভাবে গ্রামবাসীদের রক্ষা করেছিলেন৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনে ‘গণহত্যা’র প্রসঙ্গে তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ভুলে যায়নি কিছুই৷ সব আমার মনে আছে৷ নন্দীগ্রামে সূর্যোদয়ের নামে সিপিএম কীভাবে অত্যাচার চালিয়েছিল, তা সবার জানা আছে৷ নন্দীগ্রাম, খেজুরি, কোলাঘাট, পটাশপুর, নেতাইয়ের ঘটনা আমি কখনওই ভুলতে পারব না৷’’
[পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত চোলাই কারবারীদের]
পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে সিপিএমের সময়কার সন্ত্রাসের স্মৃতি উসকে দিয়ে বলেন, ‘‘এই জেলা রক্ত দেয়, কিন্তু মাথা নত করে না। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে নন্দীগ্রাম-খেজুরি তার প্রমাণ। আমি যতবার নন্দীগ্রামে ঢুকতে গিয়েছি, আমাকে চণ্ডীপুরে আটকে দেওয়া হয়েছে। ঢুকতে দেওয়া হয়নি। হার্মাদরা অ্যাসিড বাল্ব, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকত। খেজুরিতে কেউ তো যেতেই পারত না। এমনকী নন্দীগ্রামে যখন সন্ত্রাস চলছে, তখন আমি ঢুকতে চাইলে কোলাঘাটেই আমায় আটকে দেওয়া হয়। সেখানে আবার গেস্ট হাউজের সামনে সব বাস রেখে দিত। আমরা সব টপকে কোনওক্রমে ঢুকতাম। সিপিএম এভাবেই সন্ত্রাস চালাত।’’
আন্দোলন করার জেরে তাঁকে প্রাণে মারার চক্রান্ত হয়েছিল বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী লোক মারফৎ তাঁকে খবর পাঠিয়েছিলেন৷ সেই কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাকে রাজ্যপাল খবর পাঠান দ্রুত সরে যেতে। নাহলে সমস্যা হবে। খুন করার চক্রান্ত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাত ২টোয় কোনওক্রমে তিনি নন্দীগ্রামে ঢুকে ছিলেন বাইকে চেপে।’’ তাঁর মন্তব্য, “গুলি-বোমা নিয়ে তখন সিপিএম নন্দীগ্রামে সূর্যোদয় করছে। বোমা মারছে। অ্যাসিড বাল্ব ফাটাচ্ছে। বহিরাগত হার্মাদরা এলাকার দখল নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি ঢুকেছি। অনেক মানুষকে ওরা কুপিয়ে হলদি নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। অনেকে তো নিখোঁজ। অনেককে জাহাজে নিয়ে গিয়ে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে৷’’
[কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কাকা ও ভাইপোকে পিষে দিল বাস]
সিপিএমের অত্যাচার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিজেপিকে বার্তা দেন মমতা৷ বলেন, ‘‘সিপিএমের হার্মাদরা আজ বিজেপিতে ঢুকে গিয়েছে৷ ওদের থেকে সাবধানে থাকবেন৷ ওরা এখন মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে৷ সংখ্যালঘুদের খুন করে৷ বাঙালিদের তাড়িয়ে দেয়৷ আমি আজ বলে দিলাম, এই হার্মাদরা বাংলার মানুষকে যদি বিরক্ত করে তাহলে সব কটাকে তাড়িয়ে দেব৷ এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ৷’’ নাম না করে লক্ষণ শেঠকেও আক্রমণ করে বিজেপিকে কড়া ভাষায় বার্তা দেন৷ সিপিএম-বিজেপির হার্মাদদের তৃণমূলে কোনও জায়গা নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
বিরোধী বিজেপি-সিপিএমকে কড়া ভাষায় আক্রমণের পর রাজ্যের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্প তুলে ধরেন৷ জেলার একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের শিলান্যাস করেন৷ দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের জাহাজের আদলে তৈরি হওয়া নতুন ভবনের দ্বারোদঘাটনও করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এমনকি দিঘা, শংকরপুর, দাদনপাত্রবাড় এলাকার সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.