বাবুল হক, মালদহ: খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টাঙিয়ে চলছে সরকারি স্কুল। একদিন-দু’দিন নয়, চলছে টানা ১৬ বছর! যে এলাকায় নদী ভাঙনের কোনও সমস্যা নেই, প্লাবন নেই, কোনও রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। তবু কেন এই অবস্থা? এতদিন পরেও মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতির দপ্তর থেকে এমন প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না। জেলায় যে এই ধরণের স্কুল রয়েছে সেটা নাকি ‘জানা নেই’ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের বর্তমান সভাপতির। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েই দায় সেরেছেন বলে অভিযোগ।
বিগত ১৬ বছর ধরেই ঝড়-বৃষ্টি, প্রবল ঠান্ডার মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে চলছে মালদহের গৌরীপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুল৷ শিক্ষকদের পকেটের টাকা খরচ করে কেনা হয় পলিথিন এবং চাদর। সূর্যের প্রখর তাপ এবং বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ওই পলিথিন টাঙানোর ব্যবস্থা করা হয়। স্কুল চলার সময় মাটিতে বসার আগেই শতরঞ্জি পাতার ব্যবস্থা করেন শিক্ষকরা। অথচ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রাজ্য সরকার সবরকম উদ্যোগ নিলেও মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চরম উদাসীনতায় গৌরীপুরে আজও গড়ে ওঠেনি প্রাথমিক বিদ্যালয়গৃহ। চাঁচোল মহকুমার রতুয়া-২ নম্বর ব্লকের আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরীপুর গ্রামেই রয়েছে গৌরীপুর প্রাথমিক স্কুলটি। বৈশিষ্ট্য বলতে একটাই, এখনও সেই স্কুল খোলা আকাশের নিচে চলছে।
[ক্যানসার জয়ের সাহস দেখিয়ে বিশ্বমঞ্চে পুরস্কৃত বাংলার মেয়ে]
গৌরীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জিৎ চৌধুরী বলেন, “২০০২ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় এই প্রাথমিক স্কুলটি। বর্তমানে এই স্কুলে ৩৭ জন ছাত্রছাত্রী এবং তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। তবে, স্কুল শুরুর পর থেকেই কোনও ভবন নেই। স্কুলবাড়ি নেই বলে অনেক অভিভাবক এখানে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াতে চাইছেন না। আজও খোলা আকাশের নিচেই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছে এই প্রাথমিক স্কুলটি৷ স্কুল ভবন তৈরির জন্য ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস পর্যন্ত মাসের পর মাস ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু আজও কোনও লাভ হয়নি।”
[পরকীয়াতে বাধা, প্রেমিকের সাহায্যে বাড়িওয়ালাকে খুন ভাড়াটে মহিলার]
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, যেখানে স্কুলটি চলছে, সেখানে সরকারি খাস জমি রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ওই এলাকায় রাস্তার জন্য নাকি জমি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্কুলের ভবন তৈরির কাজ সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ২০১৭ সালে ওই এলাকাতেই সরকারি জমিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও কৃষকদের একটি অতিথি আবাস গড়ে তোলা হয়েছে। ওই ভবনগুলি তৈরির ক্ষেত্রে যদি রাস্তার জমি পাওয়া যায়, তাহলে প্রাথমিক স্কুলের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কেন রাস্তার জমি পাওয়া যাবে না? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর জেলা শিক্ষা সংসদের অফিস থেকে মেলেনি বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
[অবহেলায় দিন গুনছে সোদপুরে গান্ধীজির ‘দ্বিতীয় আবাস’]
আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য হৃদয়চন্দ্র ঘোষ বলেন, “গৌরীপুর প্রাথমিক স্কুলটি গ্রামের একমাত্র শিক্ষাকেন্দ্র। এই স্কুলের ভবন তৈরি নিয়ে আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খোলা আকাশের নিচে এই স্কুলে এলাকার অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের পাঠাতে চাইছেন না। স্কুল ভবন তৈরি হলে কচিকাঁচারা এই শিক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারবে। পড়াশোনা হবে।” মালদহ জেলা প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি আশিস কুণ্ডু সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আগে জানতাম না। ওই এলাকায় স্কুল ভবনের জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। জমি হস্তান্তর করার ব্যাপারে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.