বাবুল হক, মালদহ: রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়া এবার মালদহেও। রবীন্দ্রসংগীতের অবমাননা করে এখানেও বিতর্কের মুখে চার ছাত্রী। তবে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ প্রাঙ্গনে এমন ঘটনা ঘটেনি। এখানকার ঘটনা আরও লজ্জাজনক। যে চার ছাত্রী অশালীন ভাষায় রবীন্দ্রসংগীতের অবমাননা করছেন, তাঁরা নেহাতই স্কুল পড়ুয়া। মালদহের বার্লো গার্লস হাইস্কুলের বিজ্ঞান ও বাণিজ্যবিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
রবি ঠাকুরের ‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’ গানটিকে বিকৃত করে গেয়ে ইউটিউবে এখন রীতিমতো ‘স্টার’ রোদ্দুর রায়। কিন্তু বার্লো গার্লস হাইস্কুলের এই চার ছাত্রী যেন তাঁকেও ছাপিয়ে গেল। অকথ্য, অশালীন ভাষায় গোটা গানটি গায় তারা। প্রতিটি লাইনে একাধিক অশ্লীল শব্দের প্রয়োগ করে তারা। সেই গান পোস্টও হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটি ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি। গান গাওয়ার সময় স্কুলের পোশাক পরেছিল ছাত্রীরা। ফলে আসরে নামে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপশ্রী মজুমদার জানিয়েছেন, ছাত্রীদের এমন কাণ্ডে তিনি স্তম্ভিত। তাঁর কাছে কিছু বলার ভাষা নেই। অনেকেই তাঁকে সেই ভিডিওটি পাঠিয়েছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ স্কুলের সমস্ত শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। ওই চার ছাত্রীর মধ্যে তিনজনের অভিভাবকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতে পেরেছেন। তাঁদেরও আগামিকাল ডেকে পাঠানো হয়েছে। সেই বৈঠকেই এই চার ছাত্রীর ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। তবে তাঁদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক কোনও শাস্তি থাকবে বলেই জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর মতে, এখনই কড়া পদক্ষেপ না নিলে এসব অনৈতিক অশালীন আচরণ বন্ধ হওয়ার নয়।
এদিকে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়াতেই ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ওই চার ছাত্রীর মধ্যে দু’জন। তাদের বক্তব্য, স্কুলের অসম্মান হোক, তা তারা চায়নি। নিতান্তই মজার ছলে ভিডিওটি শুট করেছিল তারা। কিন্তু কীভাবে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড হল, সেই প্রসঙ্গে তারা কিছু জানে না। কিন্তু যা হয়েছে, তার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ, স্কুলের ছাত্রী, প্রাক্তনী ও শিক্ষিকাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে তারা। এও জানিয়েছে, একবার ভুল করলে সবাইকেই তো দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হয়। তাদের ক্ষেত্রে কি শেষ সুযোগও দেওয়া হবে না। নেটিজেনদের কাছে তাদের আবেদন, যেন ভিডিওটি আর না ছড়িয়ে মুছে ফেলা হয়।
যদিও ছাত্রীদের এই আবেদন কতটা গ্রাহ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি তাঁর হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। এখন সমস্ত কিছুই নির্ভর করছে স্কুলের শিক্ষিকা-সহ কর্তৃপক্ষের উপর। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই শিরোধার্য। ছাত্রীরা যা করেছে, আর যেভাবে তা নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, তারপর এনিয়ে ভাবনাচিন্তার আর কোনও অবকাশ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.