বাবুল হক: প্রায় সাত লক্ষ টাকা মূল্যের পদ্মপাতা ফি-বছর বিকোচ্ছে মাত্র সাতশো টাকায়! এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে মালদহের মৎস্য দপ্তরের বিরুদ্ধে। এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র মালদহের সাগরদিঘিতে লক্ষ লক্ষ টাকার পদ্মপাতা মাত্র ৭০০ টাকার বিনিময়ে পাইকারদের কাছে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। অথচ সরকারি নিয়ম মেনে এই পদ্মপাতাগুলি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কোনও মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছে পদ্মপাতাগুলি সরবরাহ করা হয় না বলে অভিযোগ।
পুজোর মরশুমে হাজার বিঘার সাগরদিঘির জলাশয়ে শ্রমিক লাগিয়ে পদ্মপাতা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন এক শ্রেণির পাইকাররা। পদ্মপাতা বিক্রির টাকা মৎস্য দপ্তরের কোষাগারে জমা পড়ছে কি না, তারও কোনও সদুত্তর অবশ্য সাগরদিঘি কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। মালদহের বড় সাগরদিঘির ফার্ম ম্যানেজার জীবেশ মজুমদার জানিয়েছেন, পুরো জলাশয় জুড়ে পদ্মপাতায় ভরে রয়েছে। এই পদ্মপাতার কারণে মাছ চাষ করা সম্ভব নয়। তাই এই সময় বার্ষিক ৭০০ টাকার ঠিকা চুক্তিতে পাইকারদের সাগরদিঘির পদ্মপাতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাইকাররাই শ্রমিক দিয়ে জলাশয় থেকে পদ্মপাতা তুলে নিয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরেই সাগরদিঘিতে এই নিয়ম চলে আসছে।
[ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা, গাড়ির ধাক্কায় আহত চিতাবাঘ ]
মৎস্য দপ্তরের অধীনে থাকা সাগরদিঘির ম্যানেজার আরও জানিয়েছেন, এই বিপুল পরিমাণ পদ্মপাতার সঠিক মূল্য কত তা জানা নেই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তরফ থেকে কোনও আবেদন দপ্তরে আসেনি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি আবেদন করলে অবশ্যই তাঁদের মাধ্যমে পদ্মপাতা সরবরাহ করা হবে। মালদহের ইংলিশবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের সাদুল্লাপুর যাওয়ার রাস্তার ধারে বিশাল এলাকা নিয়ে মৎস্য দপ্তরের এই সাগরদিঘি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। সাগরদিঘিতে কয়েক হাজার বিঘার জলাশয় ছাড়াও আরও ছোট ছোট অনেক জলাশয় রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ঘটানো ও চাষ করা হয়। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে পুরো জলাশয় পদ্ম পাতায় ভরে যায়। যার জন্য এই সময় পদ্মপাতার কারণে জলাশয়ে মাছ ধরা এবং চাষ করার কাজ বন্ধ থাকে।
কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বক্তব্য, পুজোর সময় তাঁরা পুজো মণ্ডপে স্টল করে ফাস্টফুড বিক্রি করেন। সেক্ষেত্রে পদ্ম পাতার প্রয়োজন হয়। চড়া দাম দিয়ে বাজার থেকে সেই পদ্মপাতা কিনতে হয়। অথচ জলের দরে সাগরদিঘির পদ্মপাতা একশ্রেণির পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এর আগেও পদ্মপাতা নেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনওরকম সদুত্তর পায়নি।
[ দেড় বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ফিরে পেল হতদরিদ্র পরিবার ]
সাগরদিঘি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এই জলাশয়ে যে পরিমাণ পদ্মপাতা ও ফুল হয়, তার মূল্য প্রায় ১০-১২ লক্ষ টাকা। কিন্তু এলাকার কোনও স্বনির্ভর দল এই পদ্মপাতাগুলি পায় না। জলের দরে পাইকারদের কাছে পদ্মপাতাগুলি সরবরাহ করে ‘কমিশন’ খাচ্ছেন এক শ্রেণির আধিকারিকরা। এমন ঘটনার কথা শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছেন মালদহ জেলা পরিষদের নয়া সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল।
তিনি বলেন, “সাগরদিঘি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ মৎস্য দপ্তরের পাশাপাশি জেলা পরিষদ থেকেও করা হয়ে থাকে। এই বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। পুরো বিষয়টি নিয়ে সাগরদিঘি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কোথাও কোনও অনিয়ম থাকলে সে ব্যাপারে রাজ্য মৎস্য দপ্তরের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.