বাবুল হক,মালদহ: সম্পত্তি হাতাতে বৃদ্ধকে আটকে রেখে দুষ্কৃতীদের মারধরের ঘটনা আকছারই ঘটে। কিন্তু বউমাই যদি শ্বশুরকে শায়েস্তা করতে দুষ্কৃতীদের ঘরে ঢোকায়, তা বেমানানই বটে। এমনটাই ঘটল মালদহের ইংরেজবাজারে।
অভিযোগ, শ্বশুরের বড় বাড়ি ও দু’টি বাগানের প্রতি পুত্রবধূর ‘নজর’ ছিল আগেই। এ নিয়ে প্রায়ই অশান্তি চলত। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধেয় শ্বশুরবাড়িতে একেবারে গুন্ডা নিয়ে হাজির হয় পুত্রবধূ। জোর করে সম্পত্তি লেখানোর জন্য শ্বশুরকে চাপ দিতে থাকে সে। পরিণতিতে ৭৫ বছরের বৃদ্ধকে উত্তম-মধ্যম দিল দুষ্কৃতীরা। পুত্রবধূর লোভের কারণে স্বামী-শাশুড়িও প্রহৃত হন। অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ি ছাড়ার আগে দেড় লক্ষ টাকা ও গয়নাগাটি নিয়ে চম্পট দিয়েছে ওই পুত্রবধূ। যাওয়ার সময় সাড়ে তিন বছরের মেয়েকেও নিয়ে গিয়েছে সে।বৃহস্পতিবার রাতেই জখম শ্বশুর সন্তোষ সরকার ও শাশুড়ি সান্ত্বনা সরকার পুত্রবধূ সোনালি চৌধুরি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইংরেজবাজার থানার আইসি পূর্ণেন্দু কুণ্ডু জানান,নির্যাতিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ শহরের পূর্ব দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা সন্তোষ সরকার (৭৫) এলাকায় মন্টুবাবু নামেই বেশি পরিচিত। মন্টুবাবু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। অনেকদিন আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ২০১৩ সালে ছেলে যিশু পুরাতন মালদহের সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা সোনালি চৌধুরিকে ভালবেসে বিয়ে করেন। যিশুর মালদহ শহরেই নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে৷ তাঁদের সাড়ে তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মন্টুবাবুর স্ত্রী সান্ত্বনাদেবীর অভিযোগ, ৩ বছর ধরে তাঁদের পুত্রবধূ বাড়ি ও জমি জায়গা নিজের নামে করে দেওয়ার জন্য শ্বশুরকে চাপ দিচ্ছিল। এর পিছনে মেয়ের বাপেরবাড়ির লোকেদের মদত রয়েছে। এ নিয়ে বাড়িতে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত। বউমা বাড়ির কারও কথাই শুনত না। এমনকী, স্বামীর সঙ্গেও সোনালির বনিবনা ছিল না। সান্ত্বনাদেবীর কথায়, “বৃহস্পতিবার সন্ধেয় সোনালি ও তার মা, ভাই বেশ কিছু গুন্ডা নিয়ে বাড়িতে ঢুকে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য আমার স্বামীকে চাপ দিতে থাকে। আমার স্বামী পুত্রবধূর কথা না শুনলে তাঁকে ওরা বেধড়ক মারধর করে৷ প্রতিবাদ করায় আমার গায়েও হাত তুলেছে ওরা। কোনওভাবে খবর পেয়ে ছেলে বাড়িতে এসে বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে ওকেও মারধর করে সোনালি৷ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে সোনালি গুন্ডা দিয়ে আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। ঘরে থাকা লাখ দেড়েক টাকা ও বেশ কিছু সোনার গয়না-সহ নাতনিকে নিয়ে চলে গিয়েছে সোনালি।”
শেষমেশ সান্ত্বনাদেবী আত্মীয় পরিজনের পরামর্শে গোটা ঘটনা জানিয়ে ইংরেজবাজার থানায় পুত্রবধূ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ জখম শ্বশুরকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়৷ শুক্রবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.