স্টাফ রিপোর্টার, মালদহ: বাড়ির একমাত্র মেয়ের চোখের চিকিৎসার জন্য হন্যে হয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুঃস্থ অভিভাবকরা। আর এই ঘটনা নজরে আসতেই পাশে দাঁড়ালেন মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের রুটি ব্যাংকের সদস্যরা। দুঃস্থ পরিবারের সেই নাবালিকা মাশকারা খাতুনের (১১) চোখের অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিলেন তাঁরা। চলতি সপ্তাহেই একটি হাসপাতালে মেয়েটির চোখের অস্ত্রোপচার করা হবে বলে রুটি ব্যাংকের সদস্যরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের হাসপাতাল রোড এলাকায় অভুক্ত মানুষদের জন্য একটি রুটি ব্যাঙ্ক চালু করে নজির গড়েছেন তনুজ জৈন, আবদুস সোভান, দীপক জৈন, অঙ্কিত চৌধুরি, কামাল সরাফ-সহ এলাকার প্রায় ৪০ জন যুবক। রুটি ব্যাংকের সেই সদস্যরাই এবার এলাকার এক নাবালিকার চোখের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন। ওই নাবালিকার পরিবারের বক্তব্য, মেয়ের চোখে টিউমার সারাতে না পারলে হয়তো তাকে বাঁচানো যাবে না। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সাহায্য চেয়েও কোনও লাভ হয়নি।
অবশেষে হরিশ্চন্দ্রপুর রুটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। নেপালে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন বলে জানিয়েছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তারা। হরিশচন্দ্রপুর থানার হাসপাতাল মোড়ের মাড়োয়ারি পাড়া এলাকায় গত ১৭ জুন চালু করা হয় দুঃস্থদের জন্য রুটি ব্যাংকটি। সেখান থেকে প্রতিদিন দুঃস্থ মানুষদের আহার হিসাবে রুটি-সবজি দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন তনুজ জৈনরা। রুটি ব্যাংকের প্রধান উপদেষ্টা তনুজ জৈন বলেন, “হরিশ্চন্দ্রপুর হাইস্কুল পাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিকুল শেখের একমাত্র মেয়ে মাশকারা খাতুনের বয়স মাত্র ১১ বছর। তার বাম চোখটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে ওই চোখ দিয়ে দেখতে পায় না। এই অবস্থায় ওই নাবালিকার অভিভাবকেরা আমাদের কাছে এসেছিলেন মেয়ের চিকিৎসার সাহায্যের জন্য। আমরা ওই নাবালিকার চিকিৎসার সমস্ত রকম দায়িত্ব নিয়েছি। খুব শীঘ্রই মাশকারা খাতুনকে নেপালে আই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। অস্ত্রোপচার করা হবে।”
এদিকে ওই নাবালিকার বাবা আরিফুল শেখ জানিয়েছেন, “ছোট বয়সে মেয়ের হাম হয়েছিল। তারপরই মেয়ের বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ঘটি-বাটি বিক্রি করে মেয়ের চোখের চিকিৎসা করছি। চোখ ঠিক না হলে ভবিষ্যতে ওর শরীরে প্রভাব পড়বে। এতে মেয়ের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এজন্য অনেক জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু কোথাও কোনও রকম ভাবে সাহায্য মেলেনি। অবশেষে হরিশ্চন্দ্রপুরের রুটি ব্যাংক নামক এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা মেয়ের চোখের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে এসেছে।” ওই সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপাতত কুড়ি হাজার টাকা খরচ করে নেপালে ওই নাবালিকার চোখের চিকিৎসা করানো হবে। আজ শনিবার আমরা মাশকারা খাতুনকে নিয়ে নেপাল যাচ্ছি। এরপর চিকিৎসকের কথামতো চোখের চিকিৎসা চলবে। এই চিকিৎসার জন্য সমস্ত ব্যয়ভার রুটি ব্যাংকের সংস্থার তরফ থেকে করা হবে।”
নাবালিকার পরিবারের লোকেদের কথায়, “আমরা খুবই গরিব। আমাদের সামর্থ্য নেই এত টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করানোর। আমাদের মেয়ের চোখের অস্ত্রোপচার করিয়ে রুটি ব্যাঙ্কের কর্মীরা যা উপকার করল তার জন্য আমরা তাঁদের কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব।”
[গরিবের টাকা নিয়ে বড়লোক হতে চাই না! টাকা ফিরিয়ে নজির দরিদ্র দম্পতির]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.